ছ'বছর আগে ভেঙে পড়েছিল উল্টোডাঙা উড়ালপুল। সেই উড়ালপুলে নতুন করে ফাটল দেখা দেওয়ায় থেমে গেল গাড়ির চাকা। ফাটলের জেরে উড়ালপুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যান চলাচল। কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) এক আধিকারিকের তরফে জানানো হয় মঙ্গলবার উড়ালপুলের রুটিন চেকআপ করার সময়ই পিয়ার ক্যাপের নীচে একটি ফাটল ধরা পড়ে। তবে এজন্য সাধারণকে উদ্বিগ্ন হতে বারণ করছেন কেএমডিএর কর্মকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, "যেখানে গোলযোগের সূত্র সেটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব তা ঠিক করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যতক্ষণ না সম্পূর্নভাবে কাজটি শেষ হচ্ছে ততক্ষণ উড়ালপুলে যান চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে"। এদিকে, উল্টোডাঙা উড়ালপুলের মতো ব্যস্ত পথে যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ঘুরপথে চলছে গাড়ি। পাশাপাশি তীব্র যানজটে জেরবার হচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা।
বুধবার কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি টুইটে বলা হয়, " কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কিছু জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে উল্টোডাঙার নতুন উড়ালপুলে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই কারণে উল্টোডাঙা উড়ালপুলগামী সমস্ত যানবাহনগুলিকে হিডকো ক্রসিং থেকেই বিকল্প রাস্তা ধরতে বলা হচ্ছে"। উল্লেখ্য, উড়ালপুল বন্ধ থাকার ফলে বাইপাস, উল্টোডাঙা, ভিআইপি রোড এবং সল্টলেকে ঢোকার মোড়ে, বিশেষ করে উল্টোডাঙা মোড়ে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেক যাত্রীকে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বিকল্প পথের হদিশ দেয় কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। ইএম বাইপাস থেকে এয়ারপোর্টগামী গাড়িগুলিকে চিংড়িঘাটা-নিউটাউন উড়ালপুল ধরে বিমানবন্দর যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, এজেসি বোস রোড ধরে এপিসি রোড হয়ে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এসে আর জি কর হয়ে যশোর রোড ধরে বিমানবন্দরে যাওয়ার বিকল্প রাস্তার কথাও বলা হয়। এছাড়াও বিমানবন্দরের দিক থেকে যে সব গাড়ি আসবে, সেগুলিকে নিউটাউন-চিংড়িঘাটা-ইএম বাইপাসের রাস্তা ধরার পরামর্শ দিয়েছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ।
উল্টোডাঙা উড়ালপুলে ফাটল। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ।
আরও পড়ুন: বন্ধ উল্টোডাঙা উড়ালপুল, যানজট এড়াতে নয়া পথের হদিশ
প্রসঙ্গত, ২০১৩-র ৩ মার্চ এই উল্টোডাঙা উড়ালপুলের বাঁকের দিকে ভেঙে পড়ে একটি অংশ। মেরামতের পর ফের উড়ালপুলটি ব্যবহার করা শুরু হয় প্রায় দেড় বছর পর। আগের বারের দুর্ঘটনার পর ওই উড়ালপুল দিয়ে বাস, লরির মতো ভারী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ফাটল দেখা দেওয়ায় উঠছে প্রশ্ন। ব্রিজ বিশেষজ্ঞদের তরফে জানানো হয়, " অন্যান্য সেতুর মতো এই সমস্যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হয়নি। এই যে ফাটলটি দেখা গেছে এটিই কেবল একটি বিপজ্জনক সংকেত নয়। মনে করা হচ্ছে নির্মাণের সময় যে মান রাখা উচিত, সেটা এখানে ছিল না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে উড়ালপুলটি এর আগেও একবার ভেঙে পড়েছিল। এবারে এটা স্পষ্ট যে, সম্পূর্ণ উড়ালপুলটির স্বাস্থ্যর যথাযথ পরীক্ষা প্রয়োজন"।
প্রসঙ্গত, গতবছর সেপ্টেম্বরে মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের সব উড়ালপুলগুলিকে যথাযথ ভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করার। তারপরও কীভাবে উল্টোডাঙা উড়ালপুলে ফাটল দেখা দিল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
Read the full story in English