দেশের কৃষিক্ষেত্রে বড় অশান্ত সময়। কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। প্রায় ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির সীমান্তে আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন খেটে খাওয়া চাষিরা। কৃষক বিদ্রোহের এই সময়েই কলকাতার দুর্গাপুজোয় থিম হিসাবে উঠে সেই ইস্যু। কৃষকদের সংগ্রাম, এবং কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের প্রতিবাদে তাঁদের আন্দোলন ফুটে উঠেছে পুজোমণ্ডপে।
দমদম পার্ক ভারতচক্র পুজো কমিটির এবছরের থিম উৎসর্গ করা হয়েছে সেইসব খেটে খাওয়া চাষিদের উদ্দেশে। যুগে যুগে দেশের অন্নদাতাদের শুধু দুর্ভোগই পোহাতে হয়েছে। নিজেদের অধিকারের দাবিতে বার বার তাঁদের নামতে হয়েছে আন্দোলনে। সে তেভাগা আন্দোলনই হোক বা নীল বিদ্রোহ, দেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া কৃষক আন্দোলনের চিত্র ধরা পড়েছে পুজোমণ্ডপে।
এবার ২১তম বর্ষ ভারতচক্রের পুজোর। আর একুশের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ইস্যু নিয়ে এবার থিমভাবনা দমদম পার্কের এই পুজোর। সৃজনে খ্যাতনামা শিল্পী অনির্বাণ দাস। তিনি যখন থিমের কাজ শুরু করেছিলেন তখনও ভাবেননি, লখিমপুর খেরিতে এত বড় একটা মর্মান্তিক কাণ্ড ঘটে যাবে। মণ্ডপের দেওয়ালে তার আগেই তিনি চিত্রিত করে ফেলেছেন, গরিব চাষির গাড়ি চাপা পড়ার ঘটনা। তাঁর কথায়, "দেশের কৃষকদের প্রকৃত অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করেছি মণ্ডপসজ্জায়। দেশের অন্নদাতারা মোটেও ভাল নেই। রাষ্ট্রের কাছে তাঁরা অসহায়। এখন তো তাঁদের গাড়িতে পিষে দেওয়া হচ্ছে। এ লজ্জা ছাড়া আর কিছু না।"
কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে মণ্ডপও সেভাবে সাজানো হয়েছে। ঢোকার মুখেই রয়েছে একটি ট্রাক্টর। তাতে লাগানো দুটি ডানা। এই ডানা অত্যাচারের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন হওয়ার প্রতীক। মণ্ডপের একটি দেওয়ালে প্রচুর জুতো-চপ্পল পর পর লাগানো হয়েছে। রয়েছে পুলিশের ব্য়ারিকেডও। শিল্পী বলেছেন, এটি প্রতিবাদের ভাষা বোঝানোর প্রতীক। দেখানো হয়েছে কীভাবে পুলিশ প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছে। পুলিশি জুলুমের চোটে জুতো-চপ্পল ফেলেই পালিয়ে গেছেন প্রতিবাদীরা।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল সেই গাড়ি চাপা দেওয়ার দৃশ্য। ঠিক যেন লখিমপুরের ঘটনাই চাক্ষুষ করবেন দর্শনার্থীরা। দেওয়ালে আঁকা, এসইউভি চাপা দিচ্ছে গরিব চাষিকে আর লেখা, 'মোটরগাড়ি ওড়ায় ধুলো, পিষে মরে চাষীগুলো!' এই ছবি দিয়েই লখিমপুরের ভয়াবহতাকে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন ভ্যাকসিন হাতে দুর্গা, অসুর করোনা, সচেতনতার পাঠ দশভুজার
শিল্পী অনির্বাণের মণ্ডপসজ্জায় স্লোগানে ভরপুর। কোথাও লেখা, আমরা কৃষক, সন্ত্রাসী নই, জয় জওয়ান, জয় কিশান,, কিশান একতা জিন্দাবাদ, লখিমপুর অমর রহে, লখিমপুর আমরা তোমায় ভুলছি না…এরকম বহু স্লোগানে ভরে উঠেছে মণ্ডপ। পুজো কমিটির সম্পাদক প্রতীক চৌধুরি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছেন, "বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর মধ্যে দিয়ে আমরা একটা বার্তা দিতে চেয়েছি। কোনও রাজনৈতিক নয়, বরং সাম্প্রতিক বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে থিমে।"
তিনি আরও বলেছেন, "বিভিন্ন সময়ে দেশে বহু কৃষক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এবারের আন্দোলন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। সেটাই আমরা পুজোর থিমে তুলে ধরেছি। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এবার ভাবনা।" এইভাবেই কলকাতার দুর্গাপুজো আর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরের ঘটনা মিলেমিশে এক হয়ে গেল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন