ভালোবাসার শহর কলকাতাকে 'ভ্যালেনটাইন্স ডে' তে উপহার দিল মেট্রোরেল। উপহারের ডালিতে নতুন রেক, নতুন মেট্রো, ঝাঁ চকচকে উন্নত মানের স্টেশন সঙ্গে নানা ফিচারে ভরা ছয়টি স্টেশন। আর সেই উপহারের মজা নিতে সক্কাল সক্কাল পৌঁছে গিয়েছেন শহরবাসী। ঘড়িতে তখন ৭.৫০। সিঁড়ি ধরে স্টেশনে উঠতেই চমকে গেলেন যাত্রীরা। চোখ ঝলমলে এ এক উন্নতমানের স্টেশন। ঘুরতে যাওয়ার উত্তেজনা ধরা পড়ল যাত্রীদের চোখে মুখে। একইসঙ্গে পরিচিত মেট্রোর এই 'নয়া চেহারা' দেখে ঘাবড়ে গেলেন বেশ কিছু যাত্রী। মুখে প্রশ্ন, কোন দিকে যাবো? এ যে 'মিনি এয়ারপোর্ট'। পকেট থেকে বের করলেন স্মার্টফোন। ক্লিকের পর ক্লিকে উঠল সেলফি, ভিডিও। এরপর, টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন পড়ল যাত্রীদের। তবে ঠিক প্রয়োজনে নয়, সাত সকালে প্রথম মেট্রো চড়ার সাক্ষী হতেই এসেছেন মহানগরবাসীরা। টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে একেবারে শেষ স্টেশন সল্টলেক স্টেডিয়ামের টিকিট কাটলেন তাঁরা।
কাঁটায় কাঁটায় ঘড়িতে ৮.০০। খুলে গেল স্ক্রিন ডোর, একইসঙ্গে মেট্রোর দরজা। চওড়া হাসি আর অবাক দৃষ্টি নিয়ে শ্লথ গতিতে মেট্রোয় প্রবেশ করলেন যাত্রীরা। আজ বসার জায়গা নিয়ে হুড়োহুড়ি নেই। সবাই চড়ার মজায় মশগুল। নতুন রেক অন্বেষণে গোটা যাত্রা পথেই মেট্রোয় পাইচারি করতে থাকলেন উৎসুক যাত্রীরা। কী কী ফিচার আছে, সে বিষয়ে আগ্রহও দেখালেন তাঁরা। নয়া মেট্রোয় রয়েছে, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, চার্জিং পোর্ট, সিসিটিভি ক্যামেরা। স্টেশনের নাম, তারিখ, সময়, যাত্রা পথের প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে ডিসপ্লেতে। পুরোনো ধাঁচেই ঘোষিত হচ্ছে স্টেশনের নাম। তবে যাত্রীদের নজর কাড়ল মেট্রোর বাইরের দৃশ্য। চেনা শহরের অচেনা ছবি ধরা পড়ল মেট্রোর বিশালাকার কাঁচের জানালায়। যাত্রা পথেই দূরদূরান্ত দেখার এই আনন্দ যেন বাড়তি পাওনা যাত্রীদের কাছে।
আরও পড়ুন:সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন সৌমিত্র
ভালোবাসার দিনে কলেজ পড়ুয়া ঋত্বিক তাঁর প্রেমিকাকে নিয়ে প্রথম মেট্রো চড়ে উদযাপন করলেন প্রেম দিবস। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমাদের ভালোবাসাও সাক্ষী থাকল নতুন মেট্রো। যেদিন থেকে শুনেছি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে থেকে চড়তে পারব নতুন মেট্রো, সেদিন থেকেই পরিকল্পনা করে ফেলেছিলাম। তবে নন্দিতাকে সেটা জানায়নি। সক্কাল সক্কাল সারপ্রাইজ দিতে নিয়ে এসেছি ওকে। আজকের দিনে প্রেমিকের থেকে এমন একটা উপহার পেতে কেমন লাগল? নন্দিতা বলেন, ' খুবই ভালো লাগছে। কারণ আমি ওকে বলেছিলাম, সল্টলেকের দিকে যাওয়া হয়না। এই মেট্রো চড়া হবে না। কলকাতা শহরে এমন উন্নত মেট্রো দেখে চমকে গিয়েছি আমি'।
আরও পড়ুন:নিয়ম মেনে চললে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাবেন মহিলারা
ভালোবাসার দিন পালনে পিছিয়ে নেই ষাটোর্দ্ধ স্বপন কুমার সাহা। চওড়া হাসি হেসে বলেন, 'আমরা প্রথম মেট্রো চড়ব বলে এসেছি। এই জার্নিটা খুব ভালো লাগছে, ভাড়াও বেশ কম। ষাট বছর বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করতে এসেছি। পাশাপাশি প্রথম মেট্রো চড়ার সাক্ষী হতে চাই। অনেক দিন ধরেই নজরে রেখেছিলাম কবে চালু হবে। যেদিন তারিখ জানতে পারি। সেদিনই পরিকল্পনা করে ফেলি। আজ এই মেট্রোতে বসে খুব রোম্যান্টিক জার্নি করছি'।
প্রসঙ্গত, এদিন মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোনোর সময় একাধিক যাত্রীরা টোকেন মেশিনে ফেললেও গেট খোলে না। সঠিক দাম দিয়ে টিকিট কাটলেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় একাধিক যাত্রীদের। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়। যাত্রা পথের সময়কাল কুড়ি মিনিট। যাত্রীরা নতুন মেট্রো উপভোগ করতে ছবি তুলতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে সময়ের প্রতি নজর তাদের ছিল না। কাজেই আপনি নতুন মেট্রো পথে যাত্রা করলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন।
আরও পড়ুন:‘ইস্টবেঙ্গল ট্রফি দেয়নি তাই আমি এখন মোহনবাগান সমর্থক’
এদিন প্রথম মেট্রোতে উপস্থিত ছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ, জিএম, আধিকারিকরা। চোখে পড়ল স্টেশনে প্রতিটি ধাপে রাখা রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক। যাত্রীদের সাহায্য করতে, সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে একাধিকবার এগিয়ে এসেছেন তাঁরা। মেট্রো আধিকারিক দেবাঞ্জি বিশ্বাস বলেন,'সত্যি তৃপ্তিজনক ব্যাপার , আজ একটা সম্পূর্ণতা পেল'। কেএমআরসিএল জিএম বলেন,' প্রথম মেট্রোর সাক্ষী থাকতে চাই। আজকের বিশেষ দিনে চালাতে পেরে সত্যিই খুব খুশি। আরও এগিয়ে যাবে মেট্রোর পথ। নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে এসেছি। সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই সফলতার জন্য'।