সন্ধ্যা সাতটা নাগাদও নয় তলার এক কোণের দোকান থেকে ধোঁয়া বেরচ্ছে। শনিবার দুপুরের পর থেকেই বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেটের সব দোকান বন্ধ, মার্কেটের ভিতরটা অন্ধকার। দমকল কর্মীরা আগুন নেভাতে তৎপর। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মনে ২০০৮ সালের ভয়াবহ আগুনের ঘা এখনও টাটকা। তাই মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীরা আগুন নিভে যাওয়ার আশ্বাস পেলেও শনিবারের রাতটা জেগেই কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বড়বাজার এলাকায় শনিবারেই আগুন লাগার ধারা অব্যাহত। তবে এদিন আগুন লাগে দুপুর একটা নাগাদ, গভীর রাতে নয়।
নন্দরাম মার্কেটের ছয় তলায় কাপড়ের গুদাম রয়েছে ব্যবসায়ী রঞ্জন দাসের। সন্ধ্যার সময় মার্কেটের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সিড়ির নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গালে হাত দিয়ে, গড়িয়ে যাওয়া জলের দিকে তাকিয়ে। নিজেই বলতে শুরু করলেন, "১১ বছর আগে সব পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে তিল তিল করে ফের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। এবার আবার সেই আতঙ্ক ফিরল।" কিন্তু আগুন তো নিয়ন্ত্রণে, বলছেন দমকলের কর্মীরা। কী ভাবছেন? রঞ্জনবাবুর জবাব, "কোনও বিশ্বাস নেই। একটু ধোঁয়া থেকেই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। এর আগের বার তাই হয়েছিল। কোথাকার আগুন এই মার্কেটে এসে সব শেষ করে দিয়েছিল। তাই আজ রাতে আর বাড়ি ফিরব না। এখানে রাস্তায় রাত কাটাব।" রঞ্জনবাবুর কথার রেশ ধরেই এখানকার পার্থ দে, রাজু দাসরা জানিয়ে দিলেন, তাঁরাও আজ রাতে আর বাড়ি যাবেন না।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ দুর্ঘটনা মেট্রো রেলে, দরজায় হাত আটকে মৃত এক
এই বাজার লাগোয়া ত্রিপলের দোকান ফিরোজউদ্দিনের। দোকানের জিনিসপত্র ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন পার্ক সার্কাসের গোডাউনে। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও সব স্টক সরাতে পারেন নি। আগুনের একটা ফুলকি শেষ করে দিতে পারে সব কিছু। চোখেমুখে আতঙ্কের স্পষ্ট ছাপ ষাটোর্দ্ধ ফিরোজ সাহেবের। তাঁর বুক ধুকপুক করছে, একথা মুখে বলছেন। তারই প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ছে দুই চোখের চাউনিতে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, "কী করে ভুলব ১১ বছর আগের ঘটনা? ন'তলার আগুন ছিটকে আসতে কোনও সময় লাগবে না। তাই সব জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলছি।"
২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিধ্বংসী আগুন লাগে নন্দরাম মার্কেট থেকে একটু দূরে বাগরি মার্কেটে। এখনও সেই মার্কেট পুরোপুরি ভাবে খোলা সম্ভব হয় নি। আর ১১ বছর আগে এই নন্দরাম মার্কেটের আগুনে সর্বস্বান্ত হয়ে যান বহু ব্যবসায়ী। বাগরি মার্কেটে আগুন লাগে শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ। এবারের আগুনও শনিবার। এই বিষয়টি ব্যবসায়ীদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কাজেই এবার আর ব্যবসায়ী-কর্মীরা মার্কেট এলাকা ছাড়তে নারাজ। তাঁরা এখন নবম তলার ছিটেফোটা ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে।