বৌবাজার মেট্রো সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, দীর্ঘ বৈঠকের পর ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিবারগুলির পুনর্বাসন নিয়ে মঙ্গলবার নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ বৈঠকের শেষে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকেই দেওয়া হবে পাঁচ লক্ষ টাকা। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিসি সেন্ট্রাল, কলকাতার মহানাগরিক ববি হাকিম, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তারা এবং কলকাতা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, বাড়ির বদলে বাড়ি তৈরি করা দেওয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে। জানা যাচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছে মেট্রোরেলও। কার কেমন বাড়ি ছিল, কেমন অবস্থা ছিল, পরিবারের সদস্য কতজন, সবকিছুর স্থির করার জন্য সমীক্ষাও করা হবে। যতদিন না বাড়ি তৈরি কাজ শেষ হবে, ততদিন ভাড়া বাড়িতে থাকার বন্দোবস্তও করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। জেমস সিনেমার কাছে মেট্রোর নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির একাধিক তলা ফাঁকা আছে, সেখানেই আপাতত থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে খবর।
আরও পড়ুন: হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বৌবাজারের শীল বাড়ি
এদিকে, যাঁদের দোকান বা প্রেস ছিল, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে কত ক্ষতি হয়েছে তা জেনে দোকানের বদলে দোকানও করে দেওয়া হবে। তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থাও করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, শীল পরিবারের মেয়ের বিয়ে সামনে, তাই তাঁদের রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও মেট্রোর পক্ষ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। মোট দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হবে শীল পরিবারের হাতে।
আরও পড়ুন: উন্নতির চাকায় চুরমার পৈতৃক ভিটে? আশঙ্কায় প্রহর গুনছে বৌবাজার
এছাড়া, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলিতে একজন করে সদস্যকে ঢুকতেও দেওয়া হবে। তবে সঙ্গে থাকবেন পুলিশ, পুরসভা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের একজন করে কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী আরও আশ্বাস দিয়েছেন, কারও জিনিস চুরি যাবে না। একাধিক সিসিটিভি লাগানো হয়েছে ঐ এলাকায়। যাঁদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হারিয়ে গিয়েছে বা বাড়ির ধ্বংসস্তুপ থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে পরিচয় পত্র-সহ অন্যান্য ডকুমেন্টও ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করা হবে। ইতিমধ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী কাজ করা হবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী কালে এইরকম ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন যাতে হতে না হয়, সে জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গোটা এলাকা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছড়া, মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি দল তৈরি করা হবে। এই দলের মাধ্যমে আলোচনা করেই পরবর্তীকালে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই দলের সদস্য হিসাবে থাকবেন কলকাতা মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তারা, বৌবাজার সোনাপট্টির এক প্রতিনিধি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সদস্যদের থেকে একজন করে মোট চার জন।
আরও পড়ুন: বৌবাজারকাণ্ডের জের, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের
মমতা আরও বলেন, কার ভুল, কার জন্য ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করার সময় এটা নয়। মেট্রোরেল যা পদক্ষেপ করবে তার সঙ্গে সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার। শুধু দুর্গা পিথুরি লেন নয়, হীদারাম স্ট্রীট, স্যাকরা পাড়া, গৌর দে লেনেরও বেশ কটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন বোধ করলে মেট্রো আধিকারিকরা পরিবারের সদস্যদের ঐ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে সরিয়ে আনবেন।