করোনা মহামারী আর আমফান ঘূর্ণিঝড়ের কোপে থেমেছিল বাঁশি। যে বাঁশি ছিল উপার্জনের একমাত্র সম্বল। কিন্তু জোড়া দুর্যোগের ফলায় রাস্তায় ঘুরে উপার্জনের পথ বন্ধ হতে বসেছিল। কিন্তু সেই সেই বাঁশিই ফের জীবনযুদ্ধে ফেরার শক্তি জুগিয়েছে বৃদ্ধ মিহির পানুয়াকে। দুর্যোগকে জয় করে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলবেন কাকদ্বীপের এই বাঁশিওয়ালা। সৌজন্যে বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসব কমিটি।
বয়স ষাট পেরিয়েছে। বাঁশি বাজিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন মিহিরবাবু। কিন্তু করোনা মহামারীর জেরে লকডাউনে সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আসে আমফান দুর্যোগ। কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডের কাছে তাঁর ঝুপড়ি ঘরও বিপর্যস্ত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। কিন্তু মনোবল হারাননি মিহিরবাবু। বাঁশি ঠোঁটে ছুঁইয়ে ফের সুরের জাদুতে মুগ্ধ করার জন্য প্রস্তুত তিনি। এবার কলকাতার বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসবের পুজো প্রাঙ্গণে সুরেলা মুহূর্ত উপহার দেবেন মিহিরবাবু। তাঁর বাঁশির সুরই পুজোর থিম মিউজিকের মতো বাজবে মণ্ডপে। কিন্তু রেকর্ড করা নয়, একেবারে লাইভ মিউজিকের আসর। মণ্ডপের এক কোণে বসে তিনি বাজাবেন তাঁর বাঁশি।
আরও পড়ুন থিম সং বাঁধবেন করোনা যোদ্ধা ডাক্তাররা, অভিনব উদ্যোগ কলকাতার পুজো কমিটির
এবার এই পুজোর থিমশিল্পী সোমনাথ দলুই। থিম ভাবনায় মণ্ডপ সেজে উঠবে এক শহর। যেখানে সমাজের শ্রেণি বিভাজন ফুটে উঠবে। যার রূপ হবে বিভিন্ন ধরনের দেওয়াল। দেওয়াল বলে দেবে উচ্চবর্গ ও নিম্মবর্গের তফাৎ। আর সেই শহরের একজন অন্যতম বাসিন্দা হলেন এক বাঁশিওয়ালা। যিনি হলেন মিহির পানুয়া। অন্যতম উদ্যোক্তা জয়দেব সাহা বলেন, "পুজো কমিটির তরফ থেকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করা হয়েছে। কিন্তু শিল্পী যখন এই ভাবনার কথা বললেন, তখন দেখলাম এর থেকে ভাল ভাবে পাশে দাঁড়ানোর আর কী উপায় থাকতে পারে। আমরা চাই, পুজোর সময় দর্শনার্থীরা এসে তাঁর সুরের জাদুতে মুগ্ধ হোন। এবং তাঁরাও পারলে ওঁর পাশে দাঁড়াতে পারেন কিছু সাহায্য করে।" সুরের জাদু তো থাকবেই, সেইসঙ্গে তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও অনুপ্রাণিত করবে মানুষকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন