শ্রীরাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার যে কাহিনিতে বাঙালি বয়ঃসন্ধির চাঞ্চল্য খুঁজে ফেরে বহুদিন আগেই তা বাঙালির ঘরের কোণে ঝুলনযাত্রা হয়ে ঢুকে পড়েছে। পরিবেশ, পরিস্থিতি আর সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতে অনেক কিছুই হারিয়েছে বাঙালি। তবুও ধরে রেখেছে ধর্মীয় রীতিনীতি, প্রথার বাধ্যবাধকতা। এবারের ঝুলন উৎসবও তার সাক্ষী হল কলকাতার বউবাজারের বাঞ্ছারাম অক্রুর দত্ত লেনের 'শ্রীমন্ত ভিলা'য়।
যে বাড়ির শ্রাবণী পূর্ণিমা অবধি চলা বর্ণময় ঝুলনযাত্রা আজ শহর কলকাতার অনেকের কাছেই আকর্ষণের। এবার ৮ আগস্ট শুরু হয়েছে এই বাড়ির ঝুলন উৎসব। চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিবারই শ্রাবণ মাসে অমাবস্যার পরের একাদশীতে শুরু হয় উৎসব। রাধাকৃষ্ণের প্রেমপর্বের এই লীলার সাক্ষী থাকে পাঁচ দিন। যা এই বাড়ির সবচেয়ে বড় উৎসব। পাশাপাশি রাস উৎসব, জন্মাষ্টমীর মত বিভিন্ন উৎসবও এই বাড়িতে সাড়ম্বরেই পালিত হয়।
আরও পড়ুন- বিভ্রান্ত তৃণমূল? ‘কাউকে ডিফেন্ড নয়’ বলেও অনুব্রতর বিরুদ্ধে পদক্ষেপহীন জোড়া-ফুল
এভাবেই কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ৮৭ বছর। ১৯৩৫-এ যা শুরু হয়েছিল বারান্দায় কিছু পুতুল সাজিয়ে। গৃহকর্তা শ্রীমন্ত পণ্ডিতের ছেলে চন্দন পণ্ডিতের ভাবনায় ভরসা রেখে তার মধ্যেই এই বাড়ি দিয়েছে ঝুলনযাত্রায় অভিনবত্ব। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের সাহায্যে পরদায় আলো ফেলে সূর্য ও চন্দ্রোদয়ের দৃশ্যায়ন এবাড়ির ঝুলনযাত্রার অঙ্গে যুক্ত করেছে নবরাগ। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে 'শ্রীমন্ত ভিলা'কে বদলে করেছে 'চাঁদ-সূর্য বাড়ি'। যেখানে মহাজগৎ আর তারই মধ্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের দোলা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
ধর্ম আর বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে বৈষ্ণবীয় রীতিনীতি পেয়েছে নতুন প্রাঙ্গণ। সঙ্গে বাড়িজুড়ে ছেয়ে থাকা পুতুল, রামায়ণ-মহাভারতের চিরাচরিত গল্প। উপরি পাওনা বলতে আলো-আঁধারির খেলা। যার সূত্র ধরে সৃজনশীলতা বাঙালির ধর্মচর্চাকে সংস্কৃতির মুক্তমঞ্চে তুলে ধরেছে।
কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলে আমরা এমন মহাজাগতিক বিশ্বের সাক্ষী হই। যার সূচনা বহু আগেই করে দিয়েছিল 'শ্রীমন্ত ভিলা'র ঝুলন উৎসব। সেখবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। পাড়া-প্রতিবেশীর সীমানা ছাড়িয়ে খবর ছড়িয়ে পড়েছে দূর-দূরান্তে। আর, তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ঝুলন দেখতে মানুষজন আসেন। দেখে হতবাক হয়ে যান। মন খুলে তারিফ করেন। যা এই উৎসবের প্রাপ্তি হয়ে থাকে বছরের পর বছর।