১১ মাস ধরে ফুসফুসে আটকে ছিল প্লাস্টিকের বাঁশি। তাই নিয়ে দিব্যি বেঁচে ছিল ১২ বছরের কিশোর। জটিল অস্ত্রোপচারের পর শুক্রবার বের হল সেই বাঁশি। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের দৌলতে আপাতত সুস্থ হয়ে উঠল সেই কিশোর।
১২ বছরের রাইহান লস্করের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে আলুর চিপস খাওয়ার সময় ভুল করে গিলে ফেলে সেই প্লাস্টিকের বাঁশি। এরপর থেকে মুখ খুললে বা মুখ দিয়ে কোনও শব্দ করলে বাঁশির হাল্কা শব্দ ভেসে আসত। প্রথম প্রথম মা-বাবা ব্যাপারটা তত গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু পরে মা-বাবা লক্ষ্য করেন, রাইহান আগের মতো বাড়ির পাশের পুকুরে বেশিক্ষণ সাঁতার কাটতে পারছে না। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। এক মিনিটের বেশি সাঁতার কাটতে পারছিল না কিশোর। জলে ডুব দিলেই হাঁসফাঁস অবস্থা হচ্ছিল রাইহানের। বুকে ব্যথা আর শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে মা-বাবার।
সমস্যা বাড়তেই ছেলেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান রাইহানের মা-বাবা। কিন্তু সেখানে সুরাহা হয়নি। রাইহানের বাবা বলেছেন, "আমার ছেলে ওই দুর্ঘটনার ব্যাপারে বলতে পারেনি। ও শুধু বলেছিল, ওর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এরপর ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা কোনও সুরাহা করতে পারেননি। এদিকে, ছেলের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। তখন বারুইপুরের এক স্থানীয় ডাক্তারকে দেখাই। তিনি পরীক্ষা করে বলেন, রাইহানের বুকে সংক্রমণ হয়েছে আর ওকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।"
এরপর কিশোরকে ইনস্টিটিউট অফ ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিশোরকে পরীক্ষা করেন প্রফেসর অরুণাভ সেনগুপ্ত। বৃহস্পতিবার কিশোরের অস্ত্রোপচার করেন তিনি।
আরও পড়ুন ‘কলকাতায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ভাল তাই আগে পুরভোট’, হাইকোর্টৈ জানাল রাজ্য
হাসপাতালের এক সিনিয়র ডাক্তার বলেছেন, "প্রথমে ছেলেটির বুকের এক্স-রে এবং সিটি-স্ক্যান করা হয়। তাতে দেখা যায়, ফুসফুসের ভিতরে বাঁশি আটকে রয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে অবস্থা স্থিতিশীল করা হয়। এরপর অস্ত্রোপচার করা হয়। সার্জারির পর বেরিয়ে আসে সেই বাঁশি। আমরা ব্রঙ্কোস্কপি করার পর অপটিক্যাল ফরসেপ দিয়ে সেই প্লাস্টিকের বাঁশি ফুসফুস থেকে বের করি।"
রাইহানের বাবা জানিয়েছেন, "আমি এখন অনেকটা স্বস্তিতে। এসএসকেএমের ডাক্তারদের কাছে আমি ঋণী। ওঁদের জন্যই আজ আমার ছেলে বেঁচে আছে।" ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আপাতত সুস্থ আছে রাইহান। কয়েকদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে সে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন