রোদ-বৃষ্টি, পুজোর লম্বা লাইন, জনজোয়ার, বাস-ট্রাম-ট্যাক্সির ঝামেলা সামলে ফুরসত কোথায় 'পুজোর ছুটি' কাটানোর? বরং দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে পুজোর চারদিন শহরকে আগলে রাখেন যাঁরা, এবার তাঁদের কথা ভেবেই বিশেষভাবে মণ্ডপ সাজাল কৈলাস বোস স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব। এবার থিমের মধ্য দিয়ে কলকাতা পুলিশের "অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, নিষ্ঠাকে" কুর্নিশ জানালো উত্তর কলকাতার এই পুজো মণ্ডপ। প্রতিবছরই নতুন ভাবনায় থিম সাজান ক্লাব কর্তারা।
আরও পড়ুন- বোধন থেকে বিসর্জন, পুজোর বিশেষত্বে স্বতন্ত্র মল্লিক বাড়ির পুজো
এবারের উত্তর কলকাতার এই পুজোর 'নায়ক' কলকাতা পুলিশ। কিন্তু কেন এমন থিম বাছলেন ক্লাব কর্তারা? যুগ্ম সম্পাদক রতন জয়সওয়াল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "পুজোকে নিরাপদ এবং সুষ্ঠুভাবে সাজিয়ে তোলার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কলকাতা পুলিশ। আমাদের পুজো উপভোগ করতে সাহায্য করেই যাঁরা পুজো উপভোগ করেন, তাঁদেরকে এই সম্মান জানাতে পেরে আমরাও আনন্দিত।"
মণ্ডপে ঢুকলেই মনে হবে যেন কলকাতা পুলিশের অন্দরমহল। কলকাতা পুলিশের ব্যবহৃত বাইক থেকে শুরু করে হেলমেট, উর্দি, বিভিন্ন কার্যকলাপকে ফটোবন্দী করে সেগুলিকে দিয়েই করা হয়েছে গোটা মণ্ডপসজ্জা।
আরও পড়ুন, অলঙ্কারের ঝলকানিতে কলকাতাকে টেক্কা দিল বর্ধমান
এমনকি মণ্ডপের পাশাপাশি দুর্গা ঠাকুরও সজ্জিত হয়েছেন কলকাতা পুলিশের আবহে। দেবীর মাথায় মুকুটের বদলে রয়েছে হেলমেট। অসুরকে বন্দী করা হয়েছে কারাগারে। এমন ভাবনার পিছনে কলকাতা পুলিশের 'সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ' অভিযানকেই অনুপ্রেরণা স্বরূপ তুলে ধরছেন ক্লাব কর্তারা।
তবে যাঁদের কথা ভেবে এত বড় উদ্যোগ নিলেন কর্মকর্তারা, সেই কলকাতা পুলিশ কতটা খুশি? যুগ্ম সম্পাদক রতন জয়সওয়াল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "প্রচন্ড খুশি পুলিশেরা। এভাবে যে কেউ ভাবতে পারে তা তাঁরা চিন্তাও করতে পারেন নি। আমাদের এই পুজোকে সফল করতে খুব সাহায্য করেছেন স্থানীয় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসি কৌশিক দাস। তিনি নিজেও খুব খুশি এই ঘটনায়। থানার তরফে কলকাতা পুলিশের ব্যবহৃত সামগ্রীও আমাদের দেওয়া হয়।"
আরও পড়ুন, কলকাতায় ‘বালাকোট’ হামলা, থাকবেন ‘অভিনন্দন বর্তমান’!
এই পুজোকে রূপদান করেছেন শিল্পী সায়ক রাজ। পুজোর বহু আগে থেকেই কলকাতার পথেঘাটে পুলিশের কার্যকলাপকে লেন্স বন্দী করে তা ফ্রেমের আকারে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে গোটা মণ্ডপে। সারা কলকাতা যখন শিল্পের প্রদর্শনে ব্যস্ত, তারই মাঝে এমন চিন্তার এমন বদলের কী কারণ? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রশ্নে যুগ্ম সম্পাদকের ঝটিতি উত্তর, "কলকাতার পুজো মানেই তো এখন শিল্প প্রদর্শনের জায়গা হয়ে উঠেছে। হয় হাতের কাজ, নয় হাতের কাজের জিনিস দিয়ে সাজানো হচ্ছে। কিন্তু এমন ভাবনা কলকাতায় এই প্রথম। যাঁরা কলকাতাকে দশহাতে সামলান, তাঁদেরকে সম্মান জানাতে পেরে আমরাও অত্যন্ত গর্বিত।"