শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে জাতীয় পতাকা উড়ছিল। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের হাতে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। সারা কলকাতায় তাঁদের দখলে চলে গেল মানবশৃঙ্খলের মাধ্যমে। নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনপিআর এবং প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর বিরোধিতায় উচ্চকিত হয়ে উঠব গোটা শহর।
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ১১ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে মানবশৃঙ্খল তৈরি করলেন, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত। পাঠ করা হল সংবিধানের প্রস্তাবনা, অংশগ্রহণকারীরা শপথ নিলেন দেশের সংবিধানকে রক্ষা করবেন তাঁরা, রক্ষা করবেন দেশের বহুত্বের সংস্কৃতিকেও।
উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণ কলকাতার গোল পার্ক পর্যন্ত মানুষ দুপুর নাগাদ রাস্তায় বেরিয়ে যখন মানব শৃঙ্খল রচনা করছিলেন, তখন স্লোগান উঠছিল, 'সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্থান হামারা', স্লোগান উঠছিল 'বন্দে মাতরম'।
শহরের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে জমায়েত হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়, মল্লিক বাজার, রিপন স্ট্রিট-আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোড মোড়, নোনাপুকুর, রাজাবাজার ও মানিক তলা। পোশাকে লাগানো ব্যাজ আর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল এনআরসি-ক্য না মানার কথা।
রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে গঠিত ইউনাইটেড ইন্টারফেথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। ব্যাপক সাড়া পড়েছিল এই কর্মসূচিতে।
আরও পড়ুন- শাহীনবাগ যোগ, জেএনইউ-য়ের স্কলারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সতনম আলুওয়ালিয়া ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস ডট কমকে বলেন, "২৬ জানুয়ারি আমাদের সংবিধানের পক্ষে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন, আমরা এ দিনটিকে এমনভাবে পালন করতে চেয়েছিলাম যাতে সংবিধানের কথাটাই পালিত হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমতা ও সৌভ্রাতৃত্বকে আমরা যে কোনও মূল্যে রক্ষা করবার শপথ নিয়েছি।"
আলুওয়ালিয়া বলেন, "৭২ বছর ধরে এ দেশে সমতা ছিল, একতা ছিল। আমরা মনে করি সেই শান্তি ও সহাবস্থানকে ক্ষুণ্ণ করার কোনও কারণ নেই।"
সংগঠকরা বলছেন, সব বয়সের মানুষেরা বেরিয়ে এই যে মানবশৃঙ্খল রচনা করেছেন, তা সংবিধানের ভিত্তিগুলিরই এক চমৎকার উদাহরণ তৈরি করেছে। আলুওয়ালিয়া বলেন, "মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন, এত লোক আসবেন আমরা ভাবিনি। আমরা মানুষের কাছ থেকে মাত্র ১০ মিনিট করে সময় চেয়েছিলাম, কোনও কোনও জায়গায় এত বেশি লোক এসেছেন যে একাধিক লাইন তৈরি করতে হয়েছে।"
শ্যামবাজার মোড়ের মানবশৃঙ্খলে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়নী ঘোষ ও তাঁর বন্ধুরা। সায়নী বললেন, "সাধারণত প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন লোকে বাড়ি বসে টিভিতে প্যারেড দেখে। এ বছর সবাই এসে জড়ো হয়েছেন দেখে দারুণ লাগছে। বৈচিত্রের মধ্যে যে ঐক্য আমাদের রয়েছে, তা কাউকে ভাঙতে দেব না। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন দেশের আত্মার উপর সরাসরি আঘাত, আমরা এর বিরোধিতা করবই।"
সংগঠকরা যদিও মাত্র ১০ মিনিট সবাইকে শৃঙ্খল রচনার ডাক দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রচুর মানুষ আসায় সময়সীমা পেরিয়েও শৃঙ্খলরচনা চলতে থাকে। সংগঠকদের দাবি, যাতে যান চলাচলের সমস্যা না হয়, সে কারণে তাঁরা দ্রুত কর্মসূচি শেষ করে দেন এবং বড় রাস্তার একদিকে জমায়েত করেছিলেন।