মাত্র সপ্তাহ খানেক আগেই খাস কলকাতার অভিজাত এলাকা সল্টলেক থেকে স্পা-এর আড়ালে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে এক তরুণীকেও সেই মধুচক্রে যুক্ত হওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করা হয় বলা অভিযোগ ওঠে। রীতিমতো চাপ দেওয়া হয় তাকে। এমনকি রাজি না হওয়ায় ব্ল্যাকমেলের শিকারও হতে হয় তরুণীকে।
তরুণীর অভিযোগ, সেখানে তিনি যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শহর কলকাতায় মহিলাদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ইদানীং বেশ কয়েকটি দেখা গিয়েছে। প্রায় সবক্ষেত্রেই পুলিশ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অপরাধের কিনারা করে অপরাধীকে আটক করেছে। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন যখন মূক ও বধির কোনও মহিলা এই ধরণের অত্যাচারের শিকার হন। সেক্ষেত্রে সমস্যার প্রধান কারণ ওই মহিলা অভিযোগ জানাতে গেলেও ভাষাগত কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয় কলকাতা পুলিশের দুঁদে আধিকারিকদের।
কিছুদিন আগেই প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় এক মূক ও বধির কিশোরীর উপর ধর্ষণের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা ইন্টারপ্রিটারের সাহায্য নিয়েছিলেন। তাতে করে হাতে নাতে ফলও মেলে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়ে মূল অভিযুক্ত। এখন এই ধরনের ইন্টারপ্রিটারের কাজের বিষয়ে অনেকেরই কোনও ধারণা নেই। মূক ও বধিরের ইশারা বুঝে তাঁদের বক্তব্যকে সহজেই বুঝে নেওয়ার কাজ করেন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্টরা। ফলে পুলিশের পক্ষে কাজটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ৬ মাসের ‘বিশেষ ট্রেনিং’ শেষে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে নতুন ৯ সদস্য
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মাত্র একটা ঘটনা নয়, এর আগে আরও একাধিক ঘটনায় কলকাতা পুলিশ এই ধরনের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্টের সাহায্য নিয়েছিল। এবং তদন্তের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য মেলে। একাধিক তদন্তে সাফল্যের ফলে কলকাতা পুলিশের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশে স্থায়ী ভাবেই বেশ কিছু সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট নিয়োগ করা হবে। যাঁদের মূলত এই ধরনের ঘটনার তদন্তে লাগানো হবে। প্রগতি ময়দান থানা তদন্তে যে দোভাষীর সাহায্য পুলিশ নিয়েছে, জানা গিয়েছে তিনি এখনও পর্যন্ত ১০৩টি মামলাতে স্পেশাল এডুকেটর এবং সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারপ্রিটারের কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, “সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্টের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে”। সূত্রের খবর, মূলত ৯টি ডিভিশনে প্রতিটিতে একজন করে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট নিয়োগের চিন্তা ভাবনা করছে কলকাতা পুলিশ। এর ফলে মূক ও বধিরদের সঙ্গে ভাষাগত দূরত্ব মিটবে কলকাতা পুলিশের মত বিশেষজ্ঞদের।
রাজ্য পুলিশের এক অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক গোলাম মুস্তাফা জমাদার এ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, “এই ধরনের প্রয়াসের ফলে তদন্তে গতি আসতে বাধ্য। ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মূক ও বধিররা নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েও থানায় আসতে ভয় পান। এই ধরনের এক্সপার্ট থাকলে তাঁরাও থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করার সাহস পাবেন। তদন্তও দ্রুত সম্পন্ন হবে। অপরাধীরাও দ্রুত ধরা পড়বে।”
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট মনস্তত্ববিদ তনিমা বন্দোপ্যাধ্যায় বলেন, “যে কোনও ক্ষেত্রে এই ধরনের মূক ও বধির মানুষরা অপরাধের শিকার হলে তা যদি জানাতে না পারে তাহলে সে নিজেই এক মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন। সেটা থেকে তাঁদের মধ্যে ডিপ্রেশন এবং আত্মহত্যার প্রবণতাও অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। শুধুমাত্র কথা না বলতে পারার কারণে একটা মানুষ বিচার পাবে না এটা মেনে নেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন”। তিনি বলেন, “হয়তো একটা বা দুটো ঘটনা প্রকাশ্যে আসে প্রতিদিন হাজার হাজার মূক ও বধির মহিলা দেশে নির্যাতনের শিকার। দেশের সরকারকে এই শ্রেণির কথা চিন্তা করতে হবে”।