আজ থেকে সপ্তাহ তিনেক আগে পেটে ব্যথা নিয়ে দীঘার বাসিন্দা বছর তেরোর জগদীশ গিরিকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করান তার মা উমা। ডাক্তাররা জানান, অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, কারণ জগদীশের পেটে পাওয়া গিয়েছে টিউমার। এরপর শুরু হয় অশেষ হয়রানির পালা, কারণ জগদীশের শরীরে বইছে বিরলতম বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্ত, যা যোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যাওয়ার উপক্রম শুধু তার পরিবারের নয়, হাসপাতালেরও বটে।
সুখের কথা, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং ডাক্তারদের তৎপরতায় আজ অর্থাৎ শনিবার সকালে নির্বিঘ্নে সমাধা হয়েছে জগদীশের আবশ্যকীয় অস্ত্রোপচার, যার জন্য রক্ত এসেছে সুদূর রাজস্থান থেকে! তাও সম্পূর্ণ সরকারি খরচে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এর আগে বম্বে ব্লাড গ্রুপের স্রেফ একজন রক্তদাতারই সন্ধান পাওয়া যায় হাসপাতালের তরফে, যাঁর বাড়িতে নজিরবিহীনভাবে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে তাঁকে রক্তদানের জন্য হাসপাতালে আনানো হয়, যেহেতু এসএসকেএম-এর নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্কে ছিল না বম্বে গ্রুপের রক্ত।
আরও পড়ুন: বাইকের ইএমআই না দেওয়ায় মা-কে খুন করল ছেলে
কিন্তু এরপর দেখা দেয় আরও এক সমস্যা। জগদীশের রক্তে হিমোগ্লোবিন এমনিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম, কাজেই সেই একজন রক্তদাতার কাছ থেকে নেওয়া এক ইউনিট রক্তে যে কুলোবে না, সেটা বুঝতে পারেন ডাক্তাররা। অতএব ফের খোঁজ খোঁজ। অবশেষে ব্লাড ব্যাঙ্কেরই এক আধিকারিক জানান, রাজস্থানের এক ব্লাড ব্যাঙ্কে হদিশ পাওয়া গেছে বম্বে গ্রুপের রক্তের।
বিনা দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজস্থান থেকেই আসবে রক্ত, তাও বিমানে করে। প্রয়োজনীয় খরচ বহন করা হবে সরকারের তরফেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আরও এক ইউনিট রক্ত উড়িয়ে আনা হলো কলকাতায়, এবং আজ করা হলো অস্ত্রোপচার। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জ্ঞান ফিরেছে জগদীশের, যদিও তার শরীরে রক্তাল্পতা এখনও দৃশ্যমান, এবং বোঝা যাচ্ছে ওই দ্বিতীয় ইউনিট রক্তের প্রয়োজনীয়তা।
উল্লেখ্য, কলকাতায় বম্বে গ্রুপের রক্ত নিয়ে বিড়ম্বনা সাম্প্রতিককালে নতুন নয়। কিছুদিন আগেই এক বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রসূতির জন্য এই গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে নাজেহাল হন তাঁর পরিবার। মাস দুয়েক আগে এক সদ্যোজাতের ক্ষেত্রেও এই রক্তের প্রয়োজন পড়ে এনআরএস হাসপাতালে। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে বম্বে গ্রুপের দাতাদের তালিকা রয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে, কিন্তু সেই তালিকা কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিকবার।