সন্ধ্যা নামতেই ফের উত্তপ্ত মুচিপাড়া। থানার সামনে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বচসা হয়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়্ন্ত্রণে আসে। ধৃত বিজেপি নেতা সজল ঘোষের বাড়িতে যান ব্যারাকপুরের তৃণমূ সাংসদ অরজুন সিং সহ পদ্ম শিবিরের রাজ্য নেতৃত্ব। এদিকে যে কায়দায় সজল ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। 'দরজা ভাঙার দৃশ্য অবাঞ্ছিত' বলে টুইটে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারাণ সম্পদাক কুণাল ঘোষ।
টুইটে কুণাল ঘোষ লিখেছেন, "মুচিপাড়া: কাল রাত থেকে বিজেপি অসভ্যতা করেছে। সজল এর মধ্যে ঢুকে অন্যায় করেছে। মানুষের ক্ষোভ থাকবেই। সজলের উচিত ছিল পুলিশকে সহযোগিতা করে বেরিয়ে আসা। তবে অভিযোগের অনুপাতে পুলিশের সময় না দিয়ে দরজা ভাঙার দৃশ্য অবাঞ্ছিত। এতে অভিযুক্তদের সুবিধা হয়।"
পুলিশের এই ভূমিকাকে কী তাহলে রাজ্যের শাসক দলও মান্যতা দেয় না? কুণাল ঘোষের ইঙ্গিতপূর্ণ টুইটে সেই বিতর্কই উস্কে গেল।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে হলেও এদিন দুপুরে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার এলাকা তোলপাড় হয়ে ওঠে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, সজল ঘোষের বাড়ির উল্টোদিকে একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্তরাই মহিলাদের কটূক্তি করেছে। স্থানীয় দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে। পাল্টা ক্লাবে ঢুকে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে বিজেপি নেতা সজল ঘোষের বিরুদ্ধে এিআইআর দায়ের হয়।
এই এফআইআর-র প্রেক্ষিতেই সজল ঘোষকে গ্রেফতার করতে এদিন দুপুরে মুচিপাড়া থানার পুলিশ তাঁর বাড়ি যায়। সজল ঘোষকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু ওই বিজেপি নেতা তা করতে অস্বীকার করেন। তারপরই তাঁর বাড়ির দরজা ভাঙে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় সজল ঘোষকে। 'পুলিশ প্রতিহিংসাপরায়ণ' বলে চিৎকার করতে থাকেন সজল। জানা গিয়েছে, জামিন অযোগ্য ধারায় সজল ঘোষের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মারধর ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- মুচিপাড়ায় ধুন্ধুমার, বাড়ির দরজা ভেঙে বিজেপি নেতা সজল ঘোষকে গ্রেফতার
এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "'সজল ঘোষ তৃণমূলে ছিলেন। ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে এসেছেন। তাঁর ক্লাবও ছিল। আর আজ সেই ক্লাবটাই দুর্নীতির আখড়া হয়ে গেল। আজকে সজল ঘোষ সমাজবিরোধী হয়ে গেলেন। তাঁর সঙ্গে পুলিশ যেভাবে ট্রিটমেন্ট করছে কোনও সভ্য সমাজে এটা হয়। দরজা ভেঙে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। সে কী ওয়ান্টেড নাকি! পুলিশের যে চরিত্র দেখলাম, সরকারের যে রবাইয়া দেখলাম যদি কেউ কথা না শোনে, বিরোধিতা করে তবে তার ক্ষমা নেই, জীবন বরবাদ করে দেবে। গণতন্ত্র কোথায়? নাগরিকদের স্বাধীনতা কোথায়। পুলিশ টিএমসির ক্যাডারের মতো কাজ করছে। না হলে এধরনের কাজ করতে পারে না। আমাদের কর্মীরাও বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।"
যদিও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে সজল ঘোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ ঠিক কাজ করেছে।" পাল্টা রাজ্যের শাসক শিবিরকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে দিয়ে যা শুরু করেছেন তা যদি সিআরপিএফ করে তাহলে রুখতে পারবেন তো? আগুন উনি জ্বালিয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের বাড়ির দরজা, জানালা ভেঙে কেন্দ্রীয় পুলিশ ঢুকলে সামলাতে পারবেন তো?"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন