কলকাতার রাস্তায় বেসরকারি বাস ক্রমশ কমছে। এরফলে বহু রুটে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন, পাশাপাশি যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিবহণ শিল্পে সংকট আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বহু পরিবহণ শ্রমিকের পেশা বদল ঘটছে। বাসি মালিক সংগঠনের দাবি, একমাত্র সরকারি আর্থিক প্যাকেজ পরিবহণ শিল্পকে রক্ষা করতে পারে। তা নাহলে কোমায় চলে যাওয়া এই ব্য়বসার স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই।
বাসের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দাবি-দাওয়া নতুন কোনও বিষয় নয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিমা, ট্যাক্স, ফাইন সহ নানা খাতে খরচ দিন দিন বেড়ে চলেছে। সরকার ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে নানা সময়ে কমিটি তৈরি করেছে। একবার তো ঘোষণাই করা হয়েছিল বাসমালিকরা নিজেরাই ভাড়া ঠিক করে নেবে। তবে ভাড়া বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত না হলেও কিন্তু করোনা আবহে পরিস্থিতি অনুযায়ী কলকাতায় বাসভাড়া বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস পরিবহণের বেহাল দশার কথা বলতে গিয়ে এখন আর বাস ভাড়া নিয়ে দাবিও জানাতে চাইছে না বাসমালিক সংগঠনের কেউ কেউ। কারও মতে, বাস্তবসম্মত নয়, রাজনৈতিক ভাবে এরাজ্য়ে ঠিক হয় বেসরকারি বাসের ভাড়া।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, 'এখন বাসভাড়া বাড়াতে গেলে ১০ টাকার বেশি করতে হবে। ১৯৭৫ সালে বাসভাড়া ছিল ১০ পয়সা। তখন থেকে এই রাজ্যে রাজনৈতিক সিদ্ধন্তে বাসভাড়া ঠিক হয়ে আসছে। কোনওরকম বিজ্ঞানভিত্তিক বাসভাড়া হয়নি।' বাসের ভাড়া নিয়ে আর দাবি জানাতে চান না ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু। তিনি বলেন, 'লিখিত বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি করছি না। তাতে কোনও লাভ হচ্ছে না। ৩০ জুন পর্যন্ত পারমিট, সিএফ, ট্যাক্স, ড্রাভিং লাইসেন্স, ফাইন না নেওয়ার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।'
বাস পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা অনেকেই পেশা বদল করেছেন, আরও অনেকে পেশা পরবর্তন করার কথা ভাবছেন। ইএমআই দিতে না পারার জন্য বহু বাস ব্যাংক টেনে নিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক শ্রমিক আর কলকাতায় ফিরছে না। রাতে বাসে থাকতে চাইছে না। রাস্তায় যাত্রী সংখ্যাও কমে গিয়েছে। বাসমালিকদের কথায়, 'সমস্য়ায় সমস্য়ায় জর্জরিত এই যাত্রী পরিবহণ শিল্প। কলকাতায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার বাস রয়েছে।' তাঁদের মতে, 'এই মুহূর্তে ৩৫-৪০ শতাংশ বাস চলছে কলকাতার রাস্তায়। পরিবহণ শিল্পের দুর্দশা ঘোচাতে পারে একমাত্র সরকারি আর্থিক প্যাকেজ।' কিন্তু সরকারের কোনও হেলদোল নেই বলেই তাঁদের অভিমত।
২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের শুরু থেকেই ধ্বস শুরু হয় বাস পরিবহণে। তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বিমা থেকে জ্বালানী তেলসহ নানান খরচের যোগান দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না বাসমালিকদের। রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়াবে না বলে ঠিক করে নিয়েছে মনে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে বারে বারে বলেও কোনও কাজ হয়নি। পাশাপাশিও রাজ্য সরকারও সেভাবে সহযোগিতা করেনি। যে ট্যাক্স কমিয়েছে তা দিনে এক কাপ চায়ের দাম। এতদিন বলেছি কোমায় চলে গিয়েছে, এবার আর কোমা থেকে বেরতে পারবে না।' 'কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।' বলেন তপনবাবু। প্রদীপ নারায়ণ বসুর কথায়, '২০২০ থেকে বলে আসছি কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে তা নাহলে বাস পরিবহণ বাঁচবে না। কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের যদি আর্থিক সহায়তা দিতে পারে তাহলে এক্ষেত্রে নয় কেন? এছাড়া কোনও রাস্তা নেই। আমাদের কথা কেউ চিন্তা করছে না। রাজ্য যদিও বা একটু করেছিল।'