কলকাতায় গত কয়েক বছরে কমেছে পথ দুর্ঘটনার হার। সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত 'সেফ লাইফ সেভ ড্রাইভ'। পথ দুর্ঘটনা রুখতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত সচেতনতার প্রচার করছে কলকাতা পুলিশ। যার সুফল মিলেছে হাতে নাতে। শহরে পথ দুর্ঘটনার হার কমাই যা প্রমাণ করে। বিশ্বমঞ্চে সমাদৃত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প। তারপরই জনপ্রিয় ও কার্যকরী প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে 'সেফ লাইফ সেভ ড্রাইভ'।
পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে পথ দুর্ঘটনা কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে কলকাতা পুলিশে নথিভূক্ত পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩,৭৩৯টি। নিহত হন ৪২২ জন। কিন্তু, তিন বছরের মধ্যেই এই সংখ্যাটা অনেকটাই কম। ২০১৮ সালে নথিভূক্ত পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৪৫৬। মৃত্যুর সংখ্যা ২৯৪। গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে মৃত্যুর হার।
আরও পড়ুন: আলোর উৎসবে কলকাতায় তুবড়ি ফেটে মৃত শিশু সহ দু’জন
পথ চলতি মানুষকে কলকাতার ট্রাফিক আইন নিয়ে ক্রমাগত সচেতন করা ও আইন লঙ্ঘনকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপেই মিলেছে সুফল। মনে করছেন কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বিগত বহু বছর ধরেই প্রমণ করেছে আসছে শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ তারা সেরা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই প্রশংসা বজায় রাখতে আমরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছি।'
কিভাবে এই অসাধ্য সাধনে সক্ষম হচ্ছে কলকাতা পুলিশ?
লালবাজারের তরফে জানানো হচ্ছে তিনটি 'ই'যের উপর ভিত্তি করেই চলছে কলকাতার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। এই তিনটি 'ই' হল শিক্ষা (এডুকেশন), প্রকৌশল (ইঞ্জিয়ারিং) ও প্রয়োগ (এনপোর্সমেন্ট)। অর্থাৎ, অফিসে বসে নয়, ট্রাফিক অফিসারদের রাস্তায় নামানো হয়েছে সচেতনতা প্রচারের জন্য। পথচারীদের আরও কর্তব্যপরায়ণ হতে বলা হচ্ছে। সচেতন করতে সোশ্যাল মিডিয়াকে যেমন ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনই জেব্রা ক্রসিং দিয়ে মানুষ পাড় না হলে তাদের জরিমান করা হচ্ছে। আগে সচেতনতায় শুধু আসল দুর্ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গান ও ছড়ার মাধ্যমেও সেই কাজ চলছে। পাশাপাশি গাড়ির চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। কখনও কখনও আইন ভগ্নকারী চালকদেরই যান নিয়ন্ত্রণ করার কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে সার্বিক সচেতনতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো কল সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান, লন্ডন থেকে ফোন নগরপাল অনুজ শর্মাকে
এসবের সঙ্গেই উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগান হচ্ছে। অটোমেটেড নম্বর প্লেট রেকগনাইজ সিস্টেমের মাধ্যমে আিন ভাঙলে গাড়িকে সহজেই চিহ্নিত করা যাচ্ছে। শহরের ১৯টি জায়গাকে ইতিমধ্য়েই দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মা প্লাইওভার, এজেসি বোস রোড, বাইপাস এলাকায় তাই বেশি ট্রাফিক অফিসার মোতায়েন থাকে। এছাড়াও রয়েছে সিসিটিভি নজরদারি। তিলোত্তমার সিগন্যালিং ব্যবস্থা বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে সামলানো হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শহরের গাড়িগুলির তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফলে কোনও ঘটনা ঘটলেই সহজে আইন লঙ্ঘনকারী যানটিকে ধরে ফেলা সম্ভব হয়েছে।
'মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত 'সেফ লাইফ সেভ ড্রাইভ' প্রকল্পের যে একটা সদর্থক লক্ষ্য করা গিয়েছে। শহর ও জেলাগুলিতেও কমেছে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা।' ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে এই দাবি করেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু আধিকারী। কলকাতার মত জেলাগুলিতেও জোরকদমে এই প্রকল্পের প্রয়োগ ঘটাতে চাইছে রাজ্য সরকার।
Read the full story in English