প্রতি বছর ক্রিসমাসে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে আসেন হাজার হাজার মানুষ। কিছুটা আলোর রোশনাই দেখতে আর কিছুটা হুজুগে। বড়দিনের কার্নিভাল ও নববর্ষ উপলক্ষে পার্ক স্ট্রিটে আলোর ঝলকানি শুরু হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে। খাওয়াদাওয়া ও হুল্লোড় যে উৎসবের মুখ্য উদ্দেশ্য, তেমনই এক উৎসবের সময় মানুষকে বই পড়তে ও পরিবেশ সচেতন হওয়ার বার্তা দিতে চায় বামফ্রন্টের ছাত্র ও যুব সংগঠন। পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে বড়দিন উপলক্ষে 'প্রোগ্রেসিভ বুক স্টল' এবছর পড়ল চতুর্থ বর্ষে।
চার বছর আগে এই উদ্যোগ নেয় ভবানীপুর ও চৌরঙ্গী লোকাল কমিটি। এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই-এর সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় এই বুকস্টল। প্রথম বছরেই তিরিশ হাজার টাকার কাছাকাছি বই বিক্রি হয়, জানালেন এই স্টলের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত, এসএফআই-কর্মী পবিত্র জীবন মাইতি। পবিত্র বিটেক-এর ছাত্র এবং ২০১৫ থেকে বাম ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৭ সালে তিনি কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এবছরও ২১ ডিসেম্বর উদ্বোধন থেকেই স্টলে থাকছেন নিয়মিত।
আরও পড়়ুন: তারাই চুপ করে আছে যাদের কিছু হারানোর আছে: নাসিরউদ্দিন শাহ
"পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে, যে রাস্তাটি যাচ্ছে ধর্মতলার দিকে, সেই ফুটপাথের একপাশে একটি ঘেরা জায়গায় থরে থরে সাজানো রয়েছে বই এবং একপাশে সাজানো রয়েছে সারি সারি চারাগাছের টব। যাঁরা বই কিনছেন, তাঁদের সবাইকে আমরা একটি করে গাছ উপহার দিচ্ছি," বলেন পবিত্র, "আমরা পরিবেশ সচেতনতার বার্তা হিসেবেই এই উপহারটা রেখেছি।" বইয়ের সঙ্গে গাছ উপহার পেয়ে খুশি ক্রেতারা সোশাল মিডিয়াতেও শেয়ার করেছেন তাঁদের উচ্ছ্বাস।
এবছর বাম ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া-র ৫০ বছর। পাশাপাশি এবছর ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের সূচনা। এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই বুকস্টলটি সাজানো হয়েছে ও আরও বেশ কিছু কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল মাধ্য়মিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পেপার বিতরণ। এছাড়া একটি এনজিওর সহায়তায় পার্ক স্ট্রিটের পথশিশুদের কম্বল বিতরণেরও উদ্যোগ নিয়েছেন বুকস্টলের উদ্য়োক্তারা।
"আমাদের স্টলে গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। এবছর আমাদের লক্ষ্য হল ৬০ হাজার। আর আমাদের ক্রেতাদের একটা অংশ কিন্তু বিদেশীরা। এই সময় অনেক বিদেশীরা কলকাতায় বেড়াতে আসেন। অনেকেই পার্ক স্ট্রিট এলাকায় থাকেন। তাঁরা খুবই উৎসাহ নিয়ে বই কেনেন। এই বছরই জার্মানি থেকে একজন এসেছিলেন। দাস ক্যাপিটাল-এর ইংরেজি অনুবাদটি নিয়ে গেলেন," পবিত্র জানান।
এছাড়া এবছর স্টলে বহু মানুষ সন্ধান করেছেন এনআরসি ও সিএএ সংক্রান্ত বইয়ের। বুকস্টলে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি ও অন্যান্য পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত এনআরসি-সিএএ সম্বন্ধীয় প্রচুর বই পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া স্টলের ঠিক পাশেই একটি বড় ফ্লেক্সে এনআরসি ও সিএএ-বিরোধী স্বাক্ষর সংগ্রহও চলছে। পার্ক স্ট্রিটের এই বুকস্টলটি ২৪ ও ২৫ তারিখ সারারাত খোলা থাকবে। ২৬ তারিখ দুপুর পর্যন্ত ইচ্ছুক নাগরিকরা বই কিনতে পারবেন ওই স্টল থেকে।