স্বাস্থ্য ভালো নেই টালা ব্রিজের। তাই সকাল থেকেই বন্ধ করা হয়েছে বাস-সহ বড় পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে ঘোর সমস্যায় উত্তর ও উত্তর শহরতলির মানুষ। সেই কারণেই এবার টালা ব্রিজ থেকে ব্যারাকপুর অবধি বসবাসকারী নিত্যযাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ তিনটি ট্রেন চালানোর কথা ঘোষণা করল পূর্ব রেল। বি.বি.ডি স্টেশন থেকে দমদম হয়ে ব্যারাকপুর পর্যন্ত চালানো হবে এই ট্রেন। পূর্ব রেল সূত্রে খবর মঙ্গলবার থেকেই যাত্রীদের এই পরিষেবা দেওয়া হবে।
জেনে নেওয়া যাক ট্রেনের নির্ধারিত সময়:
বি.বি.ডি স্টেশন থেকে ব্যারাকপুর যাওয়ার প্রথম ট্রেনটি ছাড়বে সকাল ১০.৩৮ মিনিটে, দ্বিতীয় ট্রেন ছাড়বে বেলা ১টা এবং শেষ ট্রেনটি ছাড়বে বিকেল ৩.১৮ মিনিটে। অন্যদিকে ব্যারাকপুর থেকে বি.বি.ডি স্টেশনে আসার প্রথম ট্রেনটি ছাড়বে সকাল ১১.৪৬ মিনিটে, বেলা ২.১২ মিনিটে এবং শেষ ট্রেনটি ছাড়বে বিকেল ৪.৩০ মিনিট নাগাদ। এছাড়াও ৩০২১১ আপ বি.বি.ডি স্টেশন থেকে দমদমগামী ট্রেনটিকে ব্যারাকপুর অবধি চালানো হবে। অন্যদিকে, ৩৩২১২ ডাউন দমদম থেকে শিয়ালদাগামী ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছে কিছুদিনের জন্য। এই বিশেষ তিনটি ট্রেন সব স্টেশনেই দাঁড়াবে বলে রেল সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, রবিবার থেকে ওই ব্রিজ দিয়ে ভারী যানচলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ব্রিজ পরিদর্শন করেছে বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায়, রেলকে ভগ্নপ্রায় টালা ব্রিজের একাংশ মেরামতির জন্য আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার।রবিবার, রাজ্য পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়র দেবাশিস রায় ব্রিজটি প্রাথমিকভাবে ঘুরে করে দেখেছেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দেবাশিস রায়ের কথায়, 'আমাদের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিষয়টি রেলকে জানানো হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর মেলেনি। আগামী বৃহস্পতিবার এই ব্রিজ পরীক্ষা করে দেখবেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা।'রাজ্য পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, 'এই ব্রিজের অবস্থা ভাল করে যাচাই করতে রাজ্যের কাছে আরও ভাল যন্ত্র রয়েছে। আমরা সেটাকে কাজে লাগাবো। মানুষের হয়রানি রুখতে আমরা প্রস্তুত।'
আরও পড়ুন: পুজো উদ্বোধনে অমিত শাহ, উদ্যোক্তাদের দ্বন্দ্ব চরমে
প্রসঙ্গত, বেহাল টালা ব্রিজের জীর্ণ স্বাস্থ্যের কারণে তাকে ভেঙে ফেলার মত দিয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য রাইটসকে দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি তারা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ব্রিজ পরিদর্শনে রাইটসের প্রতিনিধি ছাড়াও ছিলেন, গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স, রেল ও পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিরা। পরে তারা রিপোর্ট জমা দিয়েছে নবান্নে।
এরপরই টালা ব্রিজ নিয়ে শুক্রবার নবান্নে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘রাইটস ও পূর্ত দফতরের বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব মেনেই টালা ব্রিজে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র ছোটো গাড়ি চালানো হবে। মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন। পুজো পর্যন্ত এমনটাই করা হবে। পুজোর পর আবার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’’। এ প্রসঙ্গে পরিবহণ সচিব জানান, ‘‘ওই ব্রিজে প্রায় ৬০০-র বেশি বাস চলে। সেগুলি আর চলবে না। বিকল্প রুট তৈরি করা হচ্ছে। কিছু বাসকে ঘোরানো হবে। ওই এলাকার মানুষের কথা মাথায় রেখে ট্রেন ও মেট্রো রেলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, যাতে বেশি সংখ্যক ট্রেন চালানো হয়’’।
আরও পড়ুন: অধরা রাজীব কুমার- হঠাৎ নারদ তদন্তে গতি কেন?
এদিকে, রবিবার থেকেই টালা ব্রিজ দিয়ে ৩ টনের বেশি ওজনের গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ফলে সকাল থেকে বাস সহ বড় পণ্যবাহী গাড়ি চলছে না হেমন্চ সেতু বা টালা ব্রিজ দিয়ে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির মানুষ ঘোর সমস্যায়। তবে, হয়রানি রুখতে বিকল্প রুটে বাস ও ভারী পণ্যবাহী যান চালাচল করছে।
Read the full story in English