Advertisment

উৎসবে বেলাগাম হলেই দুয়ারে বিপদ! সতর্ক করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

ভিড় কতটা বিপদ দেকে আনতে পারে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পুজোর ভিড় ঘিরে চরম করোনা উদ্বেগ। এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

উৎসবের মরশুম! এদিকে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে তৃতীয় ঢেউয়ের চোখ রাঙানি। বছর শুরুর দিকে পরিস্থিতি বাগে আসার ইঙ্গিত মিলছিল। টিকাকরণ ও কোভিড সংক্রন্ত বিধি মানায় অনেকটায় রাশ টানা গিয়েছিল করোনা ভাইরাসে। কিন্তু 'লাগাম আলগা' হতেই ফের বিশ্বজুড়ে দাপট দেখাচ্ছে করোনা। যা নিয়ে চিন্তায় খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

Advertisment

এ নিয়ে মুখ খুলেছেন সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস। টেড্রস বলেন, ''জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে টানা ৬ সপ্তাহ করোনার গ্রাফ কমতে দেখা গিয়েছে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, টানা সাত সপ্তাহ ধরে বিশ্বে ফের উর্ধ্বমুখী করোনা পরিস্থিতি।

আবারও বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে বিশ্বে ভাইরাস নির্মূল হতে এখনও সময় লাগবে'। টেড্রোস জানান, সাম্প্রতিককালে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশ্বে ৭৮ কোটি মানুষের কাছে করোনার টিকা পৌঁছোনোর পরও এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। যা খুবই চিন্তার কারণ। করোনা রুখতে কেবল টিকার উপর ভরসা করতে না করার পরামর্শ দিয়েছেন WHO-এর ডিরেক্টর জেনারেল।

তিনি বলেন, ''করোনার টিকা একটা অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। তবে এটা করোনা রুখতে একটি মাত্র হাতিয়ার নয়। সপ্তাহের পর সপ্তাহ এই কথা বলে আসছি আমরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনা পরীক্ষা ছাড়াও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে নজরে রাখুন। এইসব বিষয়গুলোই করোনা প্রতিরোধ করতে কাজে লাগে। কিন্তু বিভ্রান্তি, জটিলতা ও অনবরত জনস্বাস্থ্য বিধি না মানার কারণে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।''

এদিকে WHO-এর এই সতর্কবাণীকে থোড়াই কেয়ার উৎসবমুখর বাঙালির। পুজোর আগে শপিং মল বা ফুটপাতের দোকান সর্বত্রই উপচে পড়ছে ভিড়। অলিগলি থেকে রাজপথ সর্বত্রই বাঙালির দাপট জারি রয়েছে। নেই শারীরিক দুরত্ববিধি। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। কারওর মাস্ক থাকলেও তা মুখের বদলে থুতনিতে ঝুলছে। এভাবেই চলছে অবাধে বিকিকিনি। শুধুমাত্র জামাকাপড় নয় রাস্তার ধারে থাকা খাবারের স্টলগুলোতেও উপচে পড়ছে ভিড়।

দুরত্ববিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধেই চলছে গায়ে গা লাগিয়ে, ফুচকা থেকে আইসক্রিম খাওয়া। আর এইসব চিত্র দেখে দেখে রীতিমত উদ্বেগে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। উৎসব শেষে কী পরিস্থিতি অপেক্ষা করে আছে তা ভেবেই শিউরে উঠছেন তাঁরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বে-আব্রু ছবি দেখা গিয়েছিল সর্বত্র। অক্সিজেন থেকে শুরু করে বেডের হাহাকারের মধ্যে প্রাণ হারাতে হয়েছিল অনেকে মানুষকেই। উৎসব শেষে আবার কি সেই ছবি অপেক্ষা করা আছে এই প্রশ্ন নিয়েই নাজেহাল বিশেষজ্ঞরা।

পুজোর মুখে কি ফের ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে করোনাভাইরাস (Coronavirus)? রাজ্যে দৈনিক মৃত্যু বাড়তে থাকায় ঘুরে ফিরে উঠছে প্রশ্নটা। উৎসবের মাঝেই চুপিসারে সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়ে চলেছে। গতদিনের তুলনায় সামান্য কমলেও রাজ্যে দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার ৮০০-র কাছাকাছিই। গত ২৪ ঘন্টায় বাংলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৭৭৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৫৫ জন। ভয়ঙ্কর ভাইরাসে প্রাণ গিয়েছে ১২ জনের। করোনার পজিটিভি  রেট ২.১৩ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৭৭ জন। করোনাকে জয় করে মোট সুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৯ জন। রাজ্যের সুস্থতার হার ৯৮.৩২ শতাংশ। বর্তমানে রাজ্যে সক্রিয় কোভিড রোঘীর সংখ্যা ৭ হাজার ৬৩৪।

আরও পড়ুন: বাধা ভেঙে দাও! এই প্রত্যয়ে এ বছর সেজে উঠছে টালা পার্কের পুজো

করোনা আবহে এবারও পুজো মণ্ডপে ঢোকা নিষেধ। ফলে রাস্তা থেকেই চলবে প্রতিমা দর্শন। তাই যানজট ও ভিড় নিয়ন্ত্রণকে মাথায় রেখে পুজোর আগে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সেরে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এরইমধ্যে এ বছরও, দুর্গা পুজো নিয়ে বেশকিছু নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ, গতবারের মতো এবারও দুর্গাপুজো-কালীপুজোয় দর্শকশূন্যই থাকবে রাজ্যের সমস্ত পুজো মণ্ডপ। প্রতিমা দর্শন করতে হবে প্যান্ডেলের বাইরে থেকে। গতবছরের করোনা বিধি মেনেই আয়োজন করতে হবে পুজোর।

সমস্ত নির্দেশ মেনে পুজো উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে গত সোমবার কলকাতার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখেন কলকাতা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। এত কিছু করেও কি ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসকে? মণ্ডপে ঢোকায় ‘না’ থাকলেও রাস্তায় কাতারে কাতারে মানুষের জমায়েত। দ্বিতীয়া থেকেই কলকাতার রাস্তায় উপচে পরছে ভিড়। শ্রীভূমি স্পোর্টিং থেকে শুরু করে নানান জায়গার মণ্ডপের সামনে থিক থিক করছে ভিড়।

publive-image
শুধুমাত্র জামাকাপড় নয় রাস্তার ধারে থাকা খাবারের স্টলগুলোতেও উপচে পড়ছে ভিড়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

গত বছর, করোনা-পরিস্থিতিতে, রাজ্যের সর্বত্র পুজো-মণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই বিধিনিষেধে সুফল মিলেছিল, এই দাবি করে, এবছর আদালতের দ্বারস্থ হন জনৈক অজয়কুমার দে। আগের বছরের নির্দেশ বহাল রাখার জন্য আদালতে আবেদন জানান তিনি। শুক্রবার, কলকাতা হাইকোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতিরা রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান, গতবছর পুজোর সময়, যে বিধিনিষেধ বহাল ছিল, তা এবছর বহাল রাখতে রাজ্যের কোনও আপত্তি আছে কি? না! 

রাজ্যের তরফে জানানো হয়, তাদের কোনও আপত্তি নেই। এরপর হাইকোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, এবারও করোনা সংক্রান্ত গতবারের বিধিনিষেধ মেনেই পুজো হবে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, গতবারের পুজোয় যেমন মণ্ডপে 'নো এন্ট্রি' ছিল, এ বারও সেই নিয়ম বলবৎ থাকছে। রাজ্য সরকার আবার বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যে, পুজোর চার দিন-সহ ১০-২০ অক্টোবর নৈশ বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে রাজ্যে। পর পর দু' দিনে দুই নির্দেশের পর অনেকেই বলছেন, মণ্ডপে নো এন্ট্রি থাকার ফলে পুজোর চার দিন সন্ধ্যা-রাতে ভিড় কিছুটা কমবে ঠিকই, যেমন গতবারও কমেছিল।

কিন্তু এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা পুজোর সময়ে গাড়িতে বা পায়ে হেঁটে শহরের আলোকসজ্জা দেখতে বা খেতে বেরোন, যাঁরা কিন্তু নৈশ বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইবেন না। সে জন্যই স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, রাতের এই খুশির মধ্যে যদি আত্মতৃপ্তি মিশে যায়,তাহলেই বিপদ। অনেক কষ্টে এই 'নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি' বজায় রাখতে জারি রাখতেই হবে আত্মশাসন। তবেই করোনা আর মাথাচাড়া দেবে না। না-হলে, সংক্রমণে রাশ টানার যাবতীয় প্রয়াসে চোনা ফেলে দেবে পুজোর ভিড়ই।

আরও পড়ুন: উৎসবের উপহার পরিবহণ দফতরের, আজ থেকেই নাইট বাস সার্ভিস চালু

কী ছবি ধরা পড়ল তৃতীয়া এবং চতুর্থীতে?

বাংলায় কি সত্যিই এখনও করোনাভাইরাস রয়েছে? বাস্তবের চিত্র দেখে তা মনে হবে না। উত্তরের হাতিবাগান থেকে মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট, দক্ষিণের গড়িয়াহাট- তৃতীয়ায় পুজো শপিং-এ থিক থিকে ভিড়। দূরত্ববিধিকে দূরে সরিয়ে রেখে অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক।

ট্রাম লাইন থেকে চওড়া রাস্তা, কার্যত সবই উৎসবমুখর বাঙালির দখলে। বড় বড় দোকান থেকে ফুটের ছোট হকার, দেদার কেরানাকার বিকিকিনি। পছন্দের জামাকাপড় হাতে নিয়ে চলছে দর-দাম। যা এককথায় করোনার রক্তচক্ষুকেও হার মানাবে। ভিড় এতটাই যে যান নিয়ন্ত্রণে হিমশিম অবস্থা পুলিশের। কালো মাথার সারিতে থমকে গিয়েছে বাস-ট্যাক্সির চাকা।

উৎসবে বাংলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের হার প্রায় ৮০০। বাড়ছে সংক্রমণ। পুজোরে আনন্দের রেশ কাটতেই সংক্রমণের মাত্রা আবারও হু হু করে বাড়তে পারে। আশঙ্কায় চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞরা। আর সেই আশঙ্কাই যেন উস্কে উঠছে কেনাকাটার এই ভিড় চিত্রে। সেই সঙ্গে দ্বিতীয়া থেকেই পুজোমন্ডপগুলির সামনে উপচে পরছে ভিড়। মন্ডপে প্রবেশাধিকারে ‘না’ থাকলেও মন্ডপের বাইরের ভিড় চিন্তা কিন্তু বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে রাজ্যে জারী করোনা বিধিকে উপেক্ষা করা। উৎসবের মরশুমে সব ভুলে মানুষ এখন বেপরোয়া। টিকার ওপর নির্ভর করে যেন এই আত্মতুষ্টি বেড়েছে বহুগুনেই। যা অজান্তেই বিপদ ডেকে আনতে পারে।

করোনার কোপে ২০২০ সালের দুর্গাপুজোয় অনেক বিধিনিষেধ ছিল। কোনও মতে ঠাকুর দেখা, বা কোথাও আড্ডা দেওয়া। হাতে গোনা কয়েকটা টুরিস্ট স্পট খুলে গিয়েছিল, সেখানেই ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকেই। আশা ছিল ২০২১-এ ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দ। কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন সেই আশাহতই হতে হয়েছে উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে। করোনার কোপ থেকে মেলেনি রেহাই। কীভাবে কী হবে,  প্ল্যানিং চলছে যখন জোর কদমে, তখন ঠিক শহর কলকাতাই ফিরিয়ে দিল পুজোর পুরনো আমেজ। না, সপ্তমী বা অষ্টমী নয়, তৃতীয়া থেকেই শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে ভিড়। এবার মণ্ডপে ধরা দিয়েছে বুর্জ খালিফা। প্রতি বছর মাতৃ প্রতিমাতে থাকে কিছু বিশষ আকর্ষণ। এবছর তার ব্যতিক্রম হল না। শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পালের হাতে আবারও সকলের নজর কাড়ল মাতৃ প্রতিমা। তবে বুর্জ খালিফার লাইটিং সঙ্গে প্যান্ডেল হপিং-এর স্বাদ নিতে প্রথমেই এই ভিড় কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ ফেলে করোনাকে ঘিরে। তবে নেট মহলে আবার এই প্রশ্নও বর্তমান, হঠাৎ যদি মেলে নয়া নির্দেশিকা, তাই আগেভাবে একটু উৎসবে গা ভাসিয়ে নেওয়া আর কি!

publive-image
পুজোর ভিড় ঘিরে চরম করোনা উদ্বেগ। এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

এবারের পুজোর ভিড় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শিশুদের- কীভাবে রক্ষা করবেন আপনার সন্তানকে

জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এবার করোনা সংক্রমণ। এমনই বেশ কিছু তথ্য সামনে এসেছে। জলপাইগুড়ি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, মালদা শহর জুড়েই বাড়েছে অজানা জ্বরে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা।

পরপর বেশ কয়েকটি শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদায়। করোনা আবহে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঘোর উদ্বেগে অভিভাবকরা। লাফিয়ে-লাফিয়ে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। পুজোর এইলাগাম ছাড়া ভিড় অচিরেই বিপদ ডেকে আনবে না তো? যেভাবে পুজোর আগে থেকেই শপিং মল থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি সর্বত্র ভিড়ের ছবি ধরা পরেছে। তাই নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তাদের দাওয়াই উৎসবের আবহে যত্ন নিন আপনার সন্তানদের। আপনিও থাকুন সতর্ক। শিশুদের সুরক্ষার জন্য বেশ কিছু দাওয়াই দিয়েছেন শহরের খ্যাতনামা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের জন্য কতটা চোখ রাঙাচ্ছে করোনা ভাইরাস, কীভাবে যত্ন নেবেন এই সময়টাতে, জেনে নিন বিশদে।

● নিজে সুরক্ষিত থাকুন সুরক্ষিত রাখুন আপনার পরিবারকেও।

● দুরত্ববিধি মেনে চলুন। ভিড়ে মাস্ক মাস্ট। কোনওভাবেই মাস্ক আপনার থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখবেন না। মাস্ক পরা কালীন মাস্কের বাইরের দিকে হাত দেবেন না।

● মাস্ক খুলে নির্দিষ্ট স্থানে সেগুলি ফেলুন, হাত পরিস্কার রাখুন। সাবান বা স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন। শিশুদের ভিড়ে নিয়ে যাবেন না।

● বাইরের খাবার খাওয়া থেকে সাবধানতা অবলম্বন করুন। শিশুদের জামাকাপড় পরিস্কার রাখুন। আপনার শিশুর জ্বর বা সঙ্গে অনান্য উপসর্গ হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারওর জ্বর হলে তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে শিশুর।

● শিশুর খেলনার জিনিসগুলি প্রতিদিন পরিষ্কার করে নিন। শিশুকে যতটা পারবেন হালকা গরম জলে স্নান করান।

● হাঁচি-কাশি হলে বাড়িতেও মাস্ক পরিয়ে রাখুন।

● করোনা প্রতিরোধে সবার প্রথম যেটা করতে হবে, ভাল করে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হবে। খাওয়ার আগে শিশুদের হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

● এই সময়টাতে শিশুদের যতটা পারবেন মশলাযুক্ত খাবার থেকে বিরত রাখুন। সবুজ সাক-সব্জি ও নিয়মিত ফল খাওয়ান।

● যেই সমস্ত জায়গায় লোকজন বেশি সেখান থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।

● ঠান্ডা জল, আইসক্রিম থেকে এই সময়টা যতটা পারবেন দূরে রাখুন। বাচ্চা কাঁদলেও দেবেন না। বাচ্চার সামনে থেকে যতটা পারবেন দূরে রাখুন। যতটা পারবেন উষ্ণ গরম জলে স্নান করাবেন আপনার শিশুকে।

● গণপরিবহন এড়িয়ে চলা ভাল। গর্ভবতী মাকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হলেও তাঁর জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো।

● পরিবারের অন্যরা বাইরে থেকে ফিরেই মা কিংবা শিশুকে স্পর্শ করবেন না, শিশু দৌড়ে এলেও না।

● ঘরের যেসব স্থান আপনার সন্তান বারবার স্পর্শ করা হয়, তা জীবাণুমুক্ত রাখুন।

● শিশুকে ঠোঁট দিয়ে আদর না করাই ভাল।

আরও পড়ুন: পুজোর দিনগুলিতে কলকাতায় টিকাকরণ নয়, ফের মিলবে কবে?

ভিড় কতটা বিপদ দেকে আনতে পারে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা?

উত্তরের হাতিবাগান থেকে মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট, দক্ষিণের গড়িয়াহাট- তৃতীয়ায় পুজো শপিং-এ থিক থিকে ভিড়। দূরত্ববিধিকে দূরে সরিয়ে রেখে অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক। ট্রাম লাইন থেকে চওড়া রাস্তা, কার্যত সবই উৎসবমুখর বাঙালির দখলে।

বড় বড় দোকান থেকে ফুটের ছোট হকার, দেদার কেরানাকার বিকিকিনি। পছন্দের জামাকাপড় হাতে নিয়ে চলছে দর-দাম। যা এককথায় করোনার রক্তচক্ষুকেও হার মানাবে। ভিড় এতটাই যে যান নিয়ন্ত্রণে হিমশিম অবস্থা পুলিশের। কালো মাথার সারিতে থমকে গিয়েছে বাস-ট্যাক্সির চাকা। উৎসবে বাংলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের হার প্রায় ৮০০। বাড়ছে সংক্রমণ। পুজোরে আনন্দের রেশ কাটতেই সংক্রমণের মাত্রা আবারও হু হু করে বাড়তে পারে। আশঙ্কায় চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞরা।

publive-image
এই ভিড়েই লুকিয়ে রয়েছে বিপদ। একপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

ভিড় নিয়ে কি বলছেন তাঁরা? ডাক্তার সুমন পোদ্দারের কথায় উঠে এসেছে আতঙ্কের সুর। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের লাগাম ছাড়া মনোভাব দেখে মনেই হবে না করোনা বিধি এখনও রাজ্যে জারি রয়েছে। তাঁর কথায়, টিকা এবং মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের মাঝে যে কোন সময়েই উঁকি দিতে পারে বিপদ। তিনি মানুষের এহেন বেপরোয়া এবং লাগামছাড়া মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, উৎসব পালন করতে অসুবিধা নেই, বিধিনিষেধ না মানলে উৎসব শেষে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে পারে করোনা। অপরদিকে ডাক্তার সৌমেন দাসের কথাতেও উঠে এসেছে একই সুর। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি মানব শরীরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠলেও কো-মর্বিডিটি আছে এমন মানুষের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস যে কোন সময়েই প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বয়স অল্প হওয়ার কারণে অনেকেই রোগটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়না এমন প্রবনতা যথেষ্টে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে উৎসবের ভিড়ে মানুষের বেপরোয়া মনোভাবকে কোন ভাবেই মানতে পারছেননা তিনি।

ইন্দ্রনীল চৌধুরি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ইতিমধ্যেই তিনি প্রায় ১০ থেকে ১২ জন করোনা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করেছেন। কাজেই শিশুরা যে এই ভিড়ে নিরাপদ নয় তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।

তার কথায়, শিশুদের কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। যেহেতু মা এবং বাবা শিশুদের প্রথম বন্ধু এবং অভিভাবক, তাই তাদের আগে সাবধানতা মেনে চলতে হবে যাতে তাদের দেখা দেখি শিশুরাও সেগুলি মেনে চলে। এর সঙ্গেই তিনি দুই বছরের ঊর্ধ্বে সকল বাচ্চাদের মাস্কের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন করোনা ভাইরাস শিশুদের যে বিশেষ ক্ষতি তেমন নয়, যেসকল বাচ্চাদের কিডনি, থাইরয়েড, অথবা জেনেটিক অসুখ রয়েছে এই ভিড় তাদের পক্ষে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন শিশুরা অনেকসময় উপসর্গবিহীন হয়ে থাকতে পারে, সেই সব ক্ষেত্রে বাচ্চারা সুপার স্প্রেডার হয়ে উঠতে পারে যা কোনও পরিবারের পক্ষে বিপজ্জনক।

ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

durga puja 2021 COVID-19
Advertisment