মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংস, সিস্টার নিবেদিতা-সহ বাঙালি বিপ্লবী, মূর্তি তৈরির তালিকায় নাম রয়েছে সকলেরই। কিন্তু হঠাৎ এই মূর্তি তৈরির হিড়িকে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। আর চার মাস বাদেই পুরভোট, তবে কী সেই কথা মাথায় রেখেই এই মূর্তি তৈরির ভাবনা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের?
আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলের রেকর্ড ভাল না’, মমতাকে চরম হুঁশিয়ারি মুসলিম সংগঠনের নেতার
প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরেই পূর্ব কলকাতার ফুলবাগানে উদ্বোধন করা হয় প্রায় ৩৫ ফিটের গান্ধীজি এবং নেতাজীর জোড়া মূর্তি। রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সিস্টার নিবেদিতার মূর্তিও। সেদিক থেকে দেখলে এক উত্তর কলকাতাতেই প্রায় ২০টিরও বেশি মনীষীদের মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে শাসক দলের তরফে। তবে পাশাপাশি শহরের দক্ষিণভাগের জন্যও এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও খবর। চলতি বছরের লোকসভা ভোটের আগে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙচুরের পর থেকে মনীষীদের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে বিরোধী পদ্মশিবিরকে বার্তা দিতে বদ্ধপরিকর মমতা সরকার। আগামী পুরভোটে সেই রাজনৈতিক লড়াইকে জারি রাখতেই এই সিদ্ধান্ত, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: স্বামীজি ঠিক না শাহ? প্রশ্ন অভিষেকের
ব্যয়ের দিক থেকে দেখতে গেলে মহাত্মা এবং নেতাজীর মূর্তি স্থাপনে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। এমনকী গঙ্গার ঘাট বরাবর এমন বেশ কিছু মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, "মূর্তিগুলি বাঙালি সংস্কৃতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেই সামনে আনে। উনিশ শতক থেকে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বঙ্গীয় নবজাগরণের সময়কালীন, রাজ্যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের একটা ধারা বজায় ছিল। সেই সময়কার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মূর্তি স্থাপন করে তাঁদেরকে সম্মানজ্ঞাপন করা হবে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তেই এই সিদ্ধান্ত। লোকসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলের সময় দেখা গিয়েছে মহিলারা উলুধ্বনি ও শঙ্খ বাজিয়ে তাঁকে বরণ করেছেন।" ঘাসফুল শিবিরের নেতাদের বক্তব্য বাঙালিয়ানাকে তুলে ধরেই এই প্রতিরোধ গড়ার কাজ চালাবেন তাঁরা।
এদিকে, কাঁকুড়গাছি ক্রসিংয়ের কাছে একটি শপিংমলের ফুটপাতে এখনও উদ্বোধনের অপেক্ষায় পলিথিনে জড়ানো রয়েছে ১২টি মূর্তি। বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি শহরের বহু জায়গায় থাকলেও, গৌরীবাড়ি বাস স্ট্যান্ডের কাছে সোনালি উজ্জ্বল রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্বামীজিকে। তৃণমূলের ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বলেন, গীতাঞ্জলি ঘড়ি এবং রবীন্দ্রনাথের মূর্তি এখন ল্যান্ডমার্ক। এখন শুধু মূর্তি স্থাপন নয় তাঁদের রক্ষা করার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।"
তবে লোকসভায় রাজ্যে ১৮টি আসনে জয়ী পদ্মশিবিরের অবশ্য মত নিজেদের 'অবৈধ' কার্যকলাপকে ঢাকতেই এই মূর্তি স্থাপন করছে তৃণমূল। বিজেপির সাধারণ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সিপিএমও লেনিন এবং স্টালিনের মূর্তি স্থাপন করেছিল, কিন্তু মানুষের রায় তাঁদের পক্ষে যায়নি। তৃণমূলের বিধায়কেরা এবং কাউন্সিলররা বর্তমানে ডেঙ্গু মোকাবেলার পরিবর্তে মূর্তির জন্য অর্থ ব্যয় করছেন। যারা এই মনীষীদের সত্যিকারের সম্মান করেন তাঁদের প্রয়োজন নেই মূর্তি বানিয়ে তা প্রকাশ করার।"
Read the full stroy in English