Advertisment

পেটকাটি, চাঁদিয়ালে আর মন মজে না, পাবজি এখন ঢের ভালো!

শহরতলির অল্পবয়সীদের মধ্যে একাংশের এখনও রয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি আগ্রহ। তাই বিকেল গড়াতে শহরতলির আকাশে গুটিকয়েক ঘুড়ি দেখতে পাওয়া যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গা, মাঞ্জা, লাটাই - এই শব্দগুলোর মেয়াদ দু'মাস থেকে গিয়ে ঠেকেছে দু-দিনে। বিশ্বকর্মা পুজোয় বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টিহীন রোদ ঝলমলে আকাশ ছিল শহরে। একেবারে ঘুড়ি ওড়ানোর উপযুক্ত। কিন্তু কলকাতার আকাশে নেই ঘুড়ি। শহরের অলিগলি থেকে আর ভেসে আসে না জোর গলায়, "ভোঁকাট্টা!"

Advertisment

তবু, প্রতিবারের মতোই এবারেও রঙ-বেরঙের ঘুড়ির পসরা নিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মনমত খদ্দের নেই। ঘুড়ি বিক্রেতা অজিত দত্ত আক্ষেপ করেন, "পাবজি, আরও কিসব মোবাইল গেম আছে, সে সবের যুগে কি আর ঘুড়ি-লাটাই চলে? ঘুড়ি লাটাইয়ের বয়স হয়েছে, ওদের দিন ফুরিয়ে গেছে।" রোদে পুড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে ঘুড়ি ওড়াতে ওদের আর ভালো লাগে না। গত কয়েক বছরে অনেকটাই কমেছে বিক্রি। ঘুড়ি উড়লেও আগের মতো আর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি দেখা যায় না আকাশে।

আরও পড়ুন:  বিশ্বকর্মা পুজোর দিন, তারিখ, ইতিহাস এবং প্রাসঙ্গিকতা

তবে শহরতলির অল্পবয়সীদের মধ্যে একাংশের এখনও রয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি আগ্রহ। তাই বিকেল গড়াতে শহরতলির আকাশে গুটিকয়েক ঘুড়ি দেখতে পাওয়া যায়। স্মার্টফোনে পাবজি, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান্সের কামড়ে ম্রিয়মাণ অবস্থা পেটকাটি-চাঁদিয়ালের। অজিতবাবু জানাচ্ছেন, "এখনকার ছেলেপুলেদের আগের তুলনায় পছন্দ বদলেছে অনেকটাই। ঘুড়ি ওড়াবে, ব্যস, এতেই শেষ। আগেকার দিনে ঘুড়ির নাম নিয়ে চলত বেচাকেনা। সে সব দিন আর ফিরবে না।"

publive-image ঘুড়ির দিন কি সত্যিই ফুরিয়েছে?

নিজের হাতে মাঞ্জা দেওয়া এখন ঝুটঝামেলা। আগেই এতেই লুকিয়ে ছিল সবচেয়ে বেশি আনন্দ। সেই ঘুড়িপ্রেমীদের আর দেখা পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন অজিতবাবু।

যুগের হাওয়ায় কেন এত বদল এল? কী বলছেন মনোবিদরা? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মনোবিদ গার্গী দাসগুপ্ত বলেন, "মা-বাবা, বাড়ির গুরুজনদের শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। বর্তমানের বাবা মায়েরাই মোবাইলের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন। তাই শিশুদের মধ্যেও সেই প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তারাও খেলা মানে মোবাইলের গেমকেই জেনে এসেছে। আর ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বন্ধু লাগে, জায়গা লাগে। কিন্তু আমরা ওদের আটকে দিয়েছিল ফ্ল্যাটের মধ্যে। বদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ওদের জীবনকে। তাই আকাশছোঁয়া ঘুড়ি ওড়ানোর স্বাদ ওরা পায় না।

"সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, এখনকার বাচ্চারা খেলা শিখতে যায়, খেলার নিয়ম মেনে খেলতে যায় তারা। বাঁধনহারা হয়ে মনগড়া খেলা খেলতে দেওয়া হয় না ওদের। সেটা এখন 'সময় নষ্টের' তকমা পেয়েছে। খেলতে যাওয়ার সংজ্ঞা বদলে গেছে। আর ঘুড়ি ওড়ানোও হচ্ছে ঠিক এমনই বাঁধনহীন আকাশছোঁয়ার খেলা। তাই খেলতে দেওয়া হয় না। বাবা কাকা দাদাদের খেলতে না দেখলে কী করে পরবর্তী প্রজন্ম শিখবে জানবে? বিশ্বকর্মা পুজোর ছুটি এখন চিকেন রেজালা আর সিনেমা হলের বড় পর্দায় আটকে। সে কারণেই রিয়েল প্লে থেকে ভার্চুয়াল প্লে-র দিকে বেশি ঝুঁকছে আগামী প্রজন্ম।"

kolkata news kolkata
Advertisment