উচ্চ-মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকের ধর্ম পরিচয় তুলে ধরে বিতর্কে উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস। সাংবাদিক বৈঠকে কেন ছাত্রীর ধর্ম প্রকাশের উপর জোর দিলেন সংসদ সভানেত্রী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মহুয়াদেবীর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী থেকে বিরোধী দল। তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি তুলেছে বিরোধী দল বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে শোকজ নোটিস পাঠানো হল উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসকে।
পরীক্ষার্থীর ধর্ম পরিচয় বড় করে দেখায় সংসদ সভানেত্রী মহুয়া দাসের নিন্দায় সরব বাংলার ইমামদের সংগঠনও। মহুয়া দাসকে সংসদ প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন- “আবেগের বশে বলে ফেলেছি”, রুমানার ধর্ম নিয়ে বিতর্কে সাফাই মহুয়া দাসের
বিজেপিও উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকের ধর্ম পরিচয় প্রকাশ করে সংসদ অন্যায় করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। ওই মন্তব্য শুধু এক মহিলা পড়ুয়াই অপমানিত নয়, বরং একটি গোটা জাতি ও সমাজেরও অবমাননা। সাফল্যের চেয়ে পড়ুয়ার ধর্ম বড় হতে পারে না। আমরা জানতে চাই এর পর রাজ্য সরকারের কী অবস্থান? ওই মন্তব্য কি কারুক ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয়েছে, নাকি রাজ্য সরকারের নির্দেশে করা হয়েছে?'
তবে, যাঁর ধর্ম পরিচয় নিয়ে এত আলোচনা সেই রুমানা সুলতানা অবশ্য এনিয়ে বিতর্ক চাইছেন না। তবে তাঁর ধর্ম পরিচয় প্রকাশ্যে না আনলেই ভালো হত বলে মনে করেন এবারের উচ্চ-মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক। রুমানার কথায়, 'ধর্মের বদলে শুধু আমার নাম প্রকাশ করলেই ভালো হত।'
আরও পড়ুন- ৪৯৯ পেয়ে ইতিহাস কান্দির রুমানা সুলতানার, উচ্চমাধ্যমিকে সর্বাধিক নম্বর প্রাপ্তি
তুঙ্গে তরজা। এই অবস্থায় ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস। জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ মহলে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। কেন পড়ুয়ার ধর্ম তুলে ধরলেন মহুয়া দাস? প্রবল বিতর্কের মাঝে সংসদ সভানেত্রী শুক্রবার বলেছেন, 'সংসদের ইতিহাসে এই প্রথম এত ভাল রেজাল্ট। মেয়েটি শিক্ষার রত্ন। ওকে নিয়ে কথা বলার সময় বেগম রোকেয়ার কথা মনে পড়ছিল আমার। যিনি একই রকম ভাবে পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। একই রকম ভাবে সকলের মধ্যে থেকে উঠে এসেছিলেন। তাই আবেগের বশে বলে ফেলেছিলাম। সাংবাদিকরা মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাই কিছু তথ্য দিয়েছিলাম, যাঁতে মেয়েটিকে তাঁরা বুঝতে পারেন। মেয়েটির গৌরব সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিল সংসদ।'
মহুয়া দাসের আচরণ নিয়ে সরগরম শিক্ষামহল। অবশ্য মহুয়া দাসের আবেগকে সম্মান জানিয়ে এই বিতর্কের জন্য বিজেপির রাজনীতিকরণের মানসিকতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেছেন, 'মুসলিম শব্দটি না বললেই ভাল হত। উনি হয়তো এটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলে ফেলেছেন। মনে রাখতে হবে এই প্রথম উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ইতিহাসে একজন সংখ্যালঘু মহিলা বা মেয়ে প্রথম হয়েছেন। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কৃতিত্বের জায়গা। সংসদ সভাপতিও একজন মহিলা। তাই তিনি হয়ত সেই মহিলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন