এত দিন পুজোর ফ্যাশনে নিজেকে নজরকাড়া করে তোলার হিড়িক ছিল আপনার, আমার। এবার সেই ট্রেন্ডেই গা ভাসালেন স্বয়ং মা দুর্গাও। স্বর্গ থেকে আনা প্রসাধনী নয়, মহালয়ার পুণ্য তিথিতে মৃন্ময়ীর চক্ষুদান হল মর্তের বাজার চলতি হাল ফ্যাশনের ল্যাকমে আইকনিক কাজল দিয়ে।
উত্তর কলকাতার পুজো বলতে যে নামগুলো তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম আহিরীটোলা সার্বজনীন। ৭৯তম বর্ষে আহিরীটোলার থিম রাজবাড়ি, বনেদিয়ানাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা, তবে রাজা বা রাজ্যপাট, কোনওটাই না থাকলেও রাজবাড়ির দালানে ইতিউতি চোখে পড়ছে বিজ্ঞাপনের মাচা। আসলে এই বদলের যুগে পানপাতায় প্রদীপে পাতা কাজল নয়, হাল আমলের ট্রেন্ড মেনেই চলতে পছন্দ করছেন এ রাজবাড়ির মেয়ে বৌ-রা।
আরও পড়ুন: পুজোয় ‘লাইভ অ্যাম্বিয়েন্ট মিউজিক’ শোনাবে নাকতলা উদয়ন সংঘ
চক্ষুদানের দিন উত্তর কলকাতার এই অস্থায়ী রাজবাড়ির উৎসবে নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন ঊর্মিমালা বসু, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, বাদ গেলেন না কিশোরকুমার জুনিয়র ওরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। তালিকায় ছিলেন রাজ চক্রবর্তী পত্নী শুভশ্রীও। শিল্পীকে ছাপিয়ে মায়ের চোখের কোলে কাজল পরিয়ে দিলেন তাঁরাও।
আহিরীটোলা সর্বজনীন পুজো কমিটিতে মৃন্ময়ীর চক্ষুদান পর্ব। pic.twitter.com/Mb7i7eAOmM
— IE Bangla (@ieBangla) October 9, 2018
ঝাড়লন্ঠনের নিয়ন আলোয় ভরে গিয়েছে বিস্তৃত দালান। মর্ডান এই রাজবাড়িতে রয়েছে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবস্থাও, সেই দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট সুরকার জয় সরকার। মূল ফটক পেরিয়ে ঢুকেই ঠাকুর দালানে পর্দার ওপারে দেবী, তখনও চোখ আঁকা বাকি। মহালয়ার বিকেলে ইতিমধ্যেই হাজির লোকজন। তবে শিল্পীর তুলির টান নয়, এ দিন প্রাধান্য পেয়েছে নামি কোম্পানীর দামি কাজলই।
আহিরীটোলায় মা-এর চক্ষুদান করলেন শুভশ্রী। pic.twitter.com/YwXrpLXkhg
— IE Bangla (@ieBangla) October 9, 2018
আসলে এই আধুনিকীকরণের যুগে প্রতিনিয়ত বদলে চলেছে পুরনো ধ্যানধারনা। চিন্তাভাবনাকে বর্তমানের নিরিখেই সাজিয়ে নিতে পছন্দ করছেন অধিকাংশই। কাজেই এ দিনও প্রত্যেকেই বেশ উপভোগ করলেন এই নয়া কনসেপ্ট। বাচিকশিল্পী ঊর্মিমালা বসুর কথায়, "দুর্গা তো আমাদের ঘরের মেয়ে, কাজেই তাঁর জন্য স্বর্গ থেকে প্রসাধনী না নিয়ে যদি ল্যাকমেই নেওয়া যায়, খারাপ কী?" নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্কর জানালেন, ''আমার কাছে চক্ষুদান মানে জ্ঞানচক্ষুর উন্মোচন, তবে এক্ষেত্রে অন্যভাবে দেখলে মায়ের মধ্যে সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাজল দিয়ে, প্রাধান্য পেয়েছে সৌন্দর্যও।" বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ''এটা বেশ নতুন একটা ভাবনা, একটা নামী ব্র্যান্ডের সঙ্গে মায়ের চক্ষুদানকে মেলানো হয়েছে। আমার ভাল লাগছে এমন একটা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে।"
উপচে পড়া ভীড়, বিজ্ঞাপনি চমক, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটেই কাটবে ষষ্ঠী থেকে নবমী। সব মিলিয়ে সে এক মহা আড়ম্বর, তবে এসবের আড়ালে রয়েছে এক মানবিক রূপও। পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়, মাটির এই প্রতিমার সমস্ত গয়নাই নীলাম করা হবে বিসর্জনের পর। এবং নীলামের সমস্ত টাকা দান করা হবে দুঃস্থ শিশু ও নাবালিকাদের কল্যাণে। শিশুকন্যা ও নাবালিকাদের নিয়ে কাজ করেন এমন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে টাকা তুলে দেওয়া হবে পুজো কমিটির তরফ থেকে।