পাঁচ বছর আগে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁর সবুজ ট্যাক্সির জন্য। সেই থেকেই বহন করে চলেছেন সংরক্ষণের লেগাসি, একক প্রয়াসে অনন্য হয়ে উঠছেন। নিজের বাড়ির গন্ডি ছাড়িয়ে চারপাশটা একটু সবুজ করার অদম্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই এই মহানগরে আর পাঁচজনের থেকে তাঁকে চেনা যায় আলাদা করে। তাঁর স্যোশাল নাম বাপি গ্রিন ট্যাক্সি। আর পোশাকি নাম ধনঞ্জয় চক্রবর্তী।
সবুজ ট্যাক্সির পর এবার মনোনিবেশ বাংলা কমিক্সে। এক্সপ্রেস ছবি - দেবস্মিতা দাস
তবে আপাতত বাংলা কমিক্সের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় তিনি নিবেদিত প্রাণ। এবং তাঁর বিশেষ লক্ষ্য, ক্ষুদে যাত্রীদের সঙ্গে বাংলা কমিক্সের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। "বাংলা কার্টুন-কমিক্স তো আমাদের ছোটবেলার সঙ্গী। এগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আজকাল বাচ্চারা সকালে উঠেই ফোন দেখে, অকারণ ইংরাজী ভাষায় কথা বলে। তাদের কাছে গল্প করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে তারা বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা-ভোদা, নন্টে-ফন্টে কিংবা গোপাল ভাঁড়ের কথা শোনেইনি। জিজ্ঞেস করলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তাই একদিন মনে হল, অন্তত এই ট্যাক্সি রাইডের সময়টুকু তারা এগুলোর সঙ্গে পরিচিত হোক," প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন ধনঞ্জয়বাবু।
ট্যাক্সিতেই যাত্রীরা পড়তে পারবেন গোপাল ভাঁড়, হাঁদা-ভোদা, নন্টে-ফন্টে। এক্সপ্রেস ছবি - দেবস্মিতা দাস
কিছু সহৃদয় মানুষ এই উদ্যোগে তাঁকে সাহায্য করার এগিয়ে এসেছেন। একজন তো আস্ত একটি পুরোনো গাড়িই উপহার দিয়েছেন। এটাকেই ট্যাক্সি বানাবেন তিনি। এখন চলছে সেই গাড়ির খোল নলচে বদলে ফেলার কাজ। এবং কলকাতার কার্টুনপ্রেমীর দল বিনামূল্যে শ্রমদান করছেন সেই কাজে। ড্যাশবোর্ড কেটে তৈরি হবে বই রাখার তাক। গাড়ির দরজার হাতলের নীচের দিকটায় পকেট করে ধনঞ্জয়বাবু রাখবেন বই। শুধু পড়াই নয়, চাইলে কেউ কিনতেও পারেন সেইসব বই, অনেকটা ছাড়ে দিয়ে দিতে রাজি এই ট্যাক্সি চালক। তবে বারবার স্পষ্ট করে দিলেন, বই বিক্রি করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। এবার অপেক্ষা, রেনোভেশনের কাজ শেষ হয়ে গেলেই তিলোত্তমার রাস্তায় দেখা মিলবে এই 'কার্টুন কারের'।
আরও পড়ুন: শহরে অ্যাপারেল স্টোর হারলে-ডেভিডসনের, ভারতের আবহাওয়ার কথা ভেবে ফ্যাব্রিক
বাচ্চারা ফোন ছেড়ে বইয়ের জগতে আসুক, আশা তাঁর। এক্সপ্রেস ছবি - দেবস্মিতা দাস।
পাশাপাশি অবশ্যই`চলতে থাকবে সবুজায়নের প্রয়াস। মুশকিল হল, যাই করেন, সবটাই তাঁর নিজের রোজগারের টাকায়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? জানতে চাওয়ায় ম্লান হাসি তাঁর মুখে। বললেন, "দেখি যতদিন পারি। চেষ্টা করছি যদি আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যেতে পারি। আমার দেশের জন্য, রাজ্যের হয়ে অনেক কাজ করতে চাই। সাহায্য না পেলে তো বেশিদিন সম্ভব হবে না। পরিবেশ বাঁচাতে চাই। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন, সেখানেও যোগ দিতে চাই।