কেউ আসেন পাশের গ্রাম থেকে, কেউ বা আবার ভিন রাজ্যের। এক চিলতে অন্ধকারের ঘরেই তাঁদের বাস। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয়ে যায় কাজ। চুল্লির ধোঁয়া উঠতে শুরু করে আকাশপানে। ইটভাটায় কাজ চলে দিনভর, রাত জুড়ে। যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বয়স দশের নিচে হতে পারে, হতে পারে একশোর এক কুড়ি কম। ছোটরা মাটি ছাঁচে ফেলে রোদে শুকোতে দেয়। বড়রা মাটি তুলে ইট বানান, চিমনির আগুনে পোড়ান। আহ্নিকগতি-বার্ষিকগতি, সব জুড়েই কাজের একই গতি।
এক একবারে ৭০-৮০টি ইট মাথায় করে চুল্লি থেকে বের করে আনতে হয়। তার পারিশ্রমিক একটাকা। ২০১৮ সালেও। একেক জনের সারাদিনে রোজগার মেরে কেটে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এভাবেই কাটছে বছরের পর বছর।
এই জীবনের কিছু ছবি এখানে। চিত্র সাংবাদিক শশী ঘোষ।
প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই মানুষ তার প্রয়োজনে বিশাল ভবন এবং বিভিন্ন নান্দনিক গঠনের অবকাঠামো তৈরী করে আসছে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে এই বিশাল বহুতল ভবন নির্মানে কংক্রিট, অ্যালুমিনিয়াম সিট, প্লাষ্টিক, কাঁচ ফাইবার, স্টীল এবং ধাতব বস্তুর ব্যাপক ব্যবহার হলেও আমাদের মত দেশে প্রধানত ব্যবহার হচ্ছে ইট।
আরও পড়ুন: এলেম প্রাচীন দেশে: ছবিতে দেখুন নকুবাবুর দুর্লভ সংগ্রহশালা
আজকের এই আধুনিক বিশ্বে ইটের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু নিয়ম না মেনে এই প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরীতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ। সমস্যা তৈরি হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে। ইট তৈরীতে পোড়ানো হচ্ছে শত শত একর জমির উর্বর জমির মাটি। ইট ভাটার মালিকেরা কৃষকদের লোভ দেখিয়ে এককালীন অল্প কিছু টাকা দিয়ে চাষের জমির গুরুত্বপূর্ণ উপরি অংশের মাটি কেটে নিয়ে যায় ইট তৈরীর কাজে ব্যবহারের জন্য।
আরও পড়ুন: খেরোর খাতা: বাঙালি নববর্ষের অন্যতম সঙ্গীর শেষের শুরু
যদিও এখন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কাজ হচ্ছে। বায়ুদূষণ যাতে না হয় সেই দিকেও নজর দিচ্ছে অনেক ইট ভাটার মালিকেরা। সব কিছুর পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি এখানকার শ্রমিকদের জীবনযাত্রা। একটা ইটভাটায় কাজের মেয়াদ ফুরালে চলে যায় অন্য ভাটায়। মজুরি সেই ১টাকা কিংবা ২টাকা।