ট্যাক্সি চালিয়ে বোনের স্মৃতিতে হাসপাতাল গড়ার তাঁর কাহিনীকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যাঁর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশ জানতে পেরেছিল এক অখ্যাত ট্যাক্সি ড্রাইভারের সংগ্রামের কথা। সেই সহিদুল লস্করের ইচ্ছে ছিল, একবার প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে হাসপাতাল গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরবেন। সব প্ল্যান মাফিক চলছিলও বটে। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের কয়েক মাসের মধ্যেই প্রসার ভারতী থেকে 'মন কি বাত'-এর একটি এপিসোডে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ আসে সইদুলের কাছে।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য বারুইপুরের বিখ্যাত পেয়ারা ও হাসপাতালের জন্য নতুন স্বপ্ন নিয়ে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন সহিদুল। কিন্তু সুদূর দিল্লিতে ছুটে গিয়েও সেই পেয়ারা তুলে দিতে পারলেন না মোদীর হাতে। তবে মন খারাপ হলেও তিনি গর্বিত এবং আনন্দিত, তাঁর মত "সামান্য ট্যাক্সিচালককে" দিল্লির দূরদর্শন ভবনে ডেকে 'মন কি বাত' এর পঞ্চাশতম এপিসোডের রেকর্ডিং করানোয়। সামনাসামনি প্রধানমন্ত্রী কে দেখতে না পেলেও তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পের যাবতীয় কার্যকলাপ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও পরিকাঠামোর তালিকা, সবই তুলে দিয়েছেন দূরদর্শনের কেন্দ্রীয় অধিকর্তার হাতে। ১২ কোটি টাকার একটি ডিপিআর দিয়েছেন সহিদুল। যা সরাসরি পৌঁছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে, এমনটাই আশা তাঁর।
আরও পড়ুন: মোদীর ‘মন কি বাত’-এ স্বপ্নপূরণের কাহিনী শোনাবেন বাংলার সহিদুল
প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের জন্য প্রসার ভারতীর ডাকে গত শনিবার রাতেই দিল্লী উড়ে গিয়েছিলেন বারুইপুরের পুড়ি গ্রামের ট্যাক্সিচালক। মৃত বোনের স্মৃতিতে হাসপাতাল গড়ার স্বীকৃতি স্বরূপ গত মার্চ মাসে 'মন বি বাত' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় সহিদুলের অনুপ্রেরণা জাগানো কাহিনি। কীভাবে বোনের স্মৃতিতে ট্যাক্সি চালিয়ে একটি গোটা হাসপাতাল তৈরি করেছেন সহিদুল, সে কথাই দেশবাসীকে জানান প্রধানমন্ত্রী। শুধু হাসপাতাল বানানো নয়, বিনামূল্যে যে চিকিত্সারও বন্দোবস্ত করেছেন সহিদুল, সেটাও জানান মোদী।
শনিবার রাতেই দিল্লী পৌঁছনোর পর অশোকা হোটেলের বিলাসবহুল ঘরে রাখা হয় সহিদুলকে। পরদিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় দূরদর্শনের স্টুডিও তে। সহিদুল বলেন, "হোটেলে থাকা, খাওয়া, দামী গাড়ী, এসবে ভাল লাগার চেয়ে খারাপ লেগেছে বেশি। মনে হয়েছে, দেশের এক শ্রেণির মানুষের হাতে কত টাকা। আর এক শ্রেণির মানুষ দুবেলা দুমুঠো খাওয়া পাচ্ছেন না, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। এত বৈভব, ঐশ্বর্য্য, ভাল লাগে নি।"
এদিন বেলা বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত দূরদর্শনের স্টূডিওতে রেকর্ডিং হয়। শুরুতেই সহিদুলের সমাজসেবামূলক প্রকল্প নিয়ে জানতে চান অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নীলম শর্মা। সহিদুলের পাশাপাশি গুজরাটের স্কুল শিক্ষক আহমেদ আলি, এক প্রতিবন্ধী সাঁতারু এবং একজন চিকিৎসকও ছিলেন অতিথি হিসেবে। পঞ্চাশতম এপিসোড উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বার্তাও দেখানো হয় বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: দুষ্কৃতী তান্ডবে অরক্ষিত রাতের ক্যানিং লোকাল, আতঙ্কে যাত্রীরা
অনুষ্ঠান শেষে নিজের হাসপাতাল গড়ার প্রকল্প সম্পর্কে ৩৬ পাতার তথ্যাদি দিল্লি দূরদর্শনের অধিকর্তার হাতে তুলে দেন সহিদুল। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর জন্য কয়েকটি পেয়ারা, এবং এক পাতার একটি ব্যক্তিগত চিঠিও দেন তিনি। সহিদুল বলেন, "মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী মন কি বাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন, তার পর থেকেই আমার একটা সুপ্ত বাসনা ছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। বড় আশা করেছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে স্টূডিওতে। হাসপাতাল গড়ার জন্য যা যা দরকার তা জানাব। তাই একটূ আশাহত হলাম।" পাশাপাশি অবশ্য এও বলেন, "অন্যদিকে এতগুলো সংগ্রামী মানুষের দেখা পেয়ে খুব অনুপ্রাণিত হলাম। সবাই বাহবা জানালেন, পাশে থাকার অঙ্গীকার করলেন।"
স্বামীর কৃতিত্বে খুব খুশি সামিমা লস্কর। তিনি বলেন, "আমার গয়নাগাটি বিক্রি করে হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে সাময়িক দুঃখ পেয়েছিলাম, এখন বুঝতে পারছি কত বড় কাজে আমি সঙ্গে থাকতে পেরেছি।"