বাংলার মিষ্টির স্বাদ যেমন খাসা, তেমনই এর ইতিহাস কিন্তু মানুষকে চমকে দেওয়ার মতো। আর বেশিরভাগ মিষ্টির জন্মলগ্ন বহু বছর আগে। কোনও কোনও মিষ্টি আবার তৎকালীন অবিভক্ত নানান প্রান্তে তৈরি। বাংলাদেশের অন্দরে কিন্তু এমন অনেক মিষ্টি তৈরি হয় যা বর্তমানে ভারতে বিপুল ভাবে জনপ্রিয়। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই বাংলার ইতিকথা।
কাঁচা গোল্লার ইতিহাসের খোঁজ করতে গিয়েই, জানা গেল বীরভূমের রামপুরহাটের কাঁচাগোল্লা নাকি সবথেকে বেশি সুস্বাদু। এই প্রসঙ্গেই রামপুরহাটের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী, বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলছেন "অনেকেই বিশ্বাস করেন যে কাঁচাগোল্লা রামপুরহাটের মিষ্টি তবে এর ইতিহাস অনেক পুরনো। আসলে অধুনা বঙ্গদেশের নাটোর - যেটা বর্তমানে বাংলাদেশের অধীনে সেখান থেকেই এই মিষ্টির শুরু। সুতরাং তথাকথিত ভাবে এটা দুই বাংলারই মিষ্টি। আর এর ইতিহাসটা একটু অবাকই করবে"।
প্রায় ২৫০ বছর আগে এই মিষ্টির জন্ম। তৎকালীন বাংলাদেশের নাটোরে ছিলেন এক প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী মধুসূদন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, "ঐ মধুসূদন নামের ব্যক্তি নাকি নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি করতেন। ওঁর অনেক কর্মচারী ছিলেন। তো একদিন হঠাৎ করেই, তার সব ময়রারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে ছানা এবং চিনি নিয়ে তখন তিনি কী করবেন ভেবে কুল পাচ্ছেন না। তখন চিনি পুড়িয়েই সিরাই তৈরি করেন তিনি। সেই সিরাই ছানার সঙ্গে মেশাতেই এক সুন্দর চেহারা যেমন নিল তেমনই স্বাদেও তুলকালাম! যেহেতু শুধু কাঁচা ছানা এবং চিনির সহযোগে তিনি এটা বানিয়েছিলেন তাই তার নাম কাঁচাগোল্লা"।
দেশভাগের পরবর্তীতে এপার বাংলায় এটি কীভাবে জনপ্রিয়তা পেল?
উত্তরে বলেন, "ওপার বাংলা থেকে এই বাংলায় নানান বিয়ে অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি নিয়ে আসা হত। তবে যতটা শুনেছি, ওপার বাংলার জমিদাররা এই স্বাদ কলকাতার নানা জমিদার বাড়িতে এবং বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দিয়েছিলেন। অনেকে তো বলেন কলকাতায় পৌঁছানোর পর এই মিষ্টি এত জনপ্রিয় হয়ে পড়ে, যে ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারেও এই মিষ্টি পাড়ি দিত। রানির খুব পছন্দের ছিল কাঁচাগোল্লা। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে রানি ভবানীর (নাটোরের রানি) শাসনকালে। আর পরবর্তীতে রামপুরহাটের নানা প্রান্তে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পরে। কলকাতার সতীশ ময়রাও এই মিষ্টি বানাতে পারদর্শী বলাই যায়"।
আরও পড়ুন < বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: এই মিষ্টি খেয়ে নাজেহাল অবস্থা বাড়ির জামাইদের, সূর্য মোদকের ‘তালশাঁসের’ ইতিহাস জানেন? >
এর খুব সুন্দর একটা গন্ধ আছে না? এর গন্ধই তো আসল। উচ্ছ্বাসের সুরে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, "কাঁচাগোল্লার মতো হালকা মিষ্টি আর দুটো নেই। সবথেকে বড় কথা তখনকার দিনে যেসব মিষ্টি বঙ্গদেশে বানানো হত তাদের মধ্যে থেকে সবথেকে বেশি নজর কেড়েছিল এই মিষ্টি। এদিকে চিনির পাক, কাঁচা ছানা কিন্তু সেই খারাপ গন্ধটা নেই বরং মিষ্টি একটা গন্ধ রয়েছে - একসঙ্গে অনেকগুলো খাওয়াও যায় এদিকে গুরুপাক নয়। এখনও এর জনপ্রিয়তা রামপুরহাটের বুকে তো কম নয়ই বরং পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্রই সমান"।