গোটা বাংলা জুড়ে নানা রকম মিষ্টি, আর বিভিন্ন জায়গায় তার বিভিন্ন স্বাদ কিংবা ভিন্ন ধরনের নাম। মিষ্টির জাত এক হলেও কিছু কিছু মিষ্টির ইতিহাসই অবাক করার মতো। মিষ্টির গল্প যখন হচ্ছে তখন ভাজা মিষ্টির রাজা পান্তুয়ার কথা না বললেই নয়। বর্তমান দিনে যদিও বা ঘিয়ে ভাজা পান্তুয়ার চল বেশি দেখা যায়। তবে এর সূত্রপাত কিন্তু আসলে রানাঘাট থেকেই। নেপথ্যের গল্পে রয়েছে অজানা এক টুইস্ট।
বিখ্যাত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী জগু ময়রার চতুর্থ প্রজন্মের কর্ণধার সুমন প্রামাণিক বলেন, "সবটাই শোনা কথা, পূর্বপুরুষদের থেকে শুনেছি তবে, রানাঘাটের পান্তুয়া এই কথায় কিন্তু একটু হলেও ভুল রয়েছে। যাঁরা পুরনো মানুষ তাঁরা কিন্তু একেবারেই পান্তুয়া বলেন না, তাঁরা বলেন লেডি কেনি! এর আসল নাম এটাই। তবে এই মিষ্টি জগু ময়রা নিজে বানাননি। কথিত রয়েছে, হরিদাস পাল এই মিষ্টির স্রষ্টা। তখনকার দিনে, এখানকার জমিদার ছিলেন পালচৌধুরীরা। তাঁদের রাজত্বে রানাঘাট ভ্রমণে আসেন লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রী। তাঁর আগমনেই এই স্পেশ্যাল মিষ্টি বানানো হয়, লেডি ক্যানিংয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে 'লেডি কেনি' রাখা হয়। সময়ের সঙ্গে নাম বদলে এখন পান্তুয়া হয়ে গেছে যেহেতু দেখতে গোল তাই। যদিও বা একথা শোনা যায় যে আসল লেডিকেনি কলকাতার ভীম নাগ তৈরি করেছিলেন"।
এর সঙ্গে সূর্য মোদকের জলভরার একটা মিল আছে না?
হ্যাঁ! কিছুটা হলেও আছে। ওটা যেমন ধোঁকা খাওয়ানো মিষ্টি এটাও তাই। এর বাইরের আবরণ ভাজা লাল হলেও মিসেস ক্যানিং ভেবেছিলেন ভেতরটাও লাল হবে। কিন্তু কামড় দিতেই ভেতরে সাদা ধবধবে ঘিয়ের জালি। উনি নাকি হেসে ফেলেছিলেন। বাইরেটা শুকনো খসখসে এদিকে ভেতরটা এমন, অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন < বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: এই মিষ্টি খেয়ে নাজেহাল অবস্থা বাড়ির জামাইদের, সূর্য মোদকের ‘তালশাঁসের’ ইতিহাস জানেন? >
কাটোয়াতেও তো তৈরি হয় পান্তুয়া?
সুমন বাবু বলেন, "আজ্ঞে হ্যাঁ! ওটাকে আসলে পান্তুয়া বলা যায়। ওদের মিষ্টির নাম 'নোরা পান্তুয়া'। ওরা এই মিষ্টি রসের মধ্যে ভিজিয়ে রাখে আর আমাদের নিয়মটা একটু আলাদা। এই মিষ্টির সঙ্গে ভারতীয় রেলের এক সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। তখন দার্জিলিং মেল রানাঘাট হয়ে যেত। শুনেছি, শুধু হরিদাস পালের দোকান থেকে এই মিষ্টি কেনা হবে বলে ট্রেন নাকি এক ঘণ্টার বেশি দাঁড়াত। ভাবা যায়"?
আরও পড়ুন < বাংলার ‘মিষ্টি গল্প’: ২৫০ বছর আগে এই মিষ্টির জন্ম, ওপার বাংলা থেকে গিয়েছিল ব্রিটেনের রানির দরবারে >
মান্না দে নাকি এই মিষ্টি খুব ভালবাসতেন?
সুমনবাবু বলেছেন, "এটা একদম ঠিক কথা। উনি নিজে এসে নিয়ে গেছেন এই মিষ্টি। আমরাও ওঁর বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ভীষণ ভালবাসতেন এই মিষ্টি। জ্যোতি বসু এখানে এসে মিষ্টি নিয়ে গেছেন। আমরাও জ্যোতি বাবুর বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম, খুব খুশি হয়েছিলেন। তারপর ধরুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পাঠিয়েছি এই মিষ্টি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গেছে।"
অনেকেই পান্তুয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন গোলাপজাম কিংবা কালোজাম - তবে এই ঘিয়ের আঁচে ভাজা স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবে না বলেই দাবি করেন সুমনবাবু।