ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের উদযাপন ভাইফোঁটা । অমাবস্যার পর প্রতিপদ তিথি পড়লেই শুরু হয়ে যায় ভাইফোঁটা দেওয়া। অনেকে ভাইফোঁটা দেন প্রতিপদে, কেউ আবার ফোঁটা দেন দ্বিতীয়ায়। পরিবার-গোত্র অনুযায়ী রীতি আলাদা হলেও ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় বোনেদের এই প্রার্থনা গোটা দেশে সমাদৃত। জীবনের সব কাঁটা দূর করে, যমের দুয়ারে কাঁটা পুঁতে, ভাইয়ের সুস্থ দীর্ঘায়ু কামনা করা।
পুরাণে ভাইফোঁটা সংক্রান্ত নানা কাহিনি লোকমুখে ফেরে। তার মধ্যে যম ও যমুনার গল্পটিই সর্বাধিক প্রচলিত। ভগবান সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যার সন্তান ধর্মরাজ যম ও যমুনা। কিন্তু ভগবান সূর্যের তেজ সহ্য করতে পারেন না তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা। তাই তিনি তাঁর সন্তান যমরাজ ও যমুনাকে ছেড়ে পিতৃগৃহে চলে যান। তিনি নিজের জায়গায় তাঁর প্রতিকৃতি ছায়াকে ভগবান সূর্যের কাছে রেখে যান।
যমরাজ ও যমুনা তো ছায়ার সন্তান নন। তাই তাঁরা ছিলেন মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত । কিন্তু ভাইবোনের মধ্যে বড় মিল। যম খুবই স্নেহ করতেন যমুনাকে। এরপর যমুনারও বিয়ে হয়ে যায়। তারপর কার্তিক অমাবস্যার পর দ্বিতীয়ায় যমরাজ বোনের ডাকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছন। ভাই ঘরে আসায় আনন্দে মেতে ওঠেন যমুনা। ভাইকে খুবই আদর আপ্যায়ন করেন। যমরাজকে ফোঁটা দিয়ে পুজো করেন। তারপর থেকে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা পালিত হয়।
আরও পড়ুন এবছর কতক্ষণ ভাইফোঁটা, কোথা থেকে এল ফোঁটার প্রথা?
ভাইফোঁটায় সব বোনেদের বাঁ-হাতের কড়ে আঙুলে ফোঁটা দিতে হয়। দই বা চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার রীতিই সবথেকে বেশি। সেই সময় বলতে হয় - “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা/ আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’’
মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর দুপুর ২ টো ৩৬ মিনিটে দ্বিতীয় শুরু হয়েছে। শেষ হবে পরদিন, বুধবার ১৫ নভেম্বর দুপুর ১ টা ৪৭ মিনিটে। কথিত আছে, এই তিথিতেই যমুনা তাঁর ভাই যমকে বাড়ি ডেকে ফোঁটা দিয়ে খেতে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই তিথি যমদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। তবে কথিত আছে, জন্মবারে ভাইকে ফোঁটা দিতে নেই।