পুরাণ বলে শিব নাকি স্বয়ম্ভূ। তাঁর বিস্তৃতি খুঁজে পাওয়া ভার। স্বয়ং ব্রহ্মা ও বিষ্ণু পর্যন্ত তাঁর সেই বিস্তৃতি খুঁজে পাননি। আর, তিনি নাকি আত্মভোলা। স্বল্পেই সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট হলে ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। এই সব কারণে, বাংলায় শিবমন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম না। তবে, সব শিবমন্দির সমানভাবে জাগ্রত নয়। ভক্তরা জানেন, কোন মন্দিরের শিবলিঙ্গ জাগ্রত, আর কোনটি নয়। সেই মতো তাঁরা মন্দিরে ভিড় করেন, পূজা দেন। শিব লিঙ্গের মাথায় জল ঢালেন।
এমনই এক জাগ্রত শিবলিঙ্গ রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার আড়িয়াদহে। এই মন্দির বুড়োশিব মন্দির নামে পরিচিত। যাঁর উৎপত্তির কাহিনি রীতিমতো অবাক করে দেয় ভক্তদের। কথিত আছে, বুড়োশিব স্বয়ম্ভূ। রাজা হোসেন শাহর আমলে এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নে দেখেন মহাদেব তাঁকে কিছু বলছেন। তিনি দেখতে পান, মহাদেব তাঁকে বলছেন যে অনেকদিন গঙ্গার ধারে জঙ্গলের মধ্যে রয়েছি। এবার একটু সেবার ব্যবস্থা কর। পরদিন ওই ব্রাহ্মণ, গঙ্গাপারে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে সত্যিই একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। ব্রাহ্মণের মুখ থেকে এই কথা শোনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ওই শিবলিঙ্গের পূজার ব্যবস্থা করেন।
বুড়োশিবকে নিয়ে অলৌকিক কাহিনির সংখ্যা অবশ্য কম না। এই যেমন, বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংসের ঘটনা। কথিত আছে, হেস্টিংস ছিলেন হিন্দুবিদ্বেষী। সেই সময় ভারতে ইংরেজদের রাজধানী ছিল শহর কলকাতা। হেস্টিংসেরও কানে পৌঁছল বুড়োশিবের সম্পর্কে নানা অলৌকিক কাহিনি। তিনি নিজেই গেলেন বুড়োশিবের মন্দিরে ভক্তদের বিশ্বাস ভাঙাতে। গিয়েই সঙ্গে উপস্থিত কর্মীদের নির্দেশ দিলেন এই পাথর বা শিবলিঙ্গ তুলে পাশের গঙ্গায় ফেলে দিতে।
আরও পড়ুন- চৈতন্যের আগে থেকে জাগ্রত মুক্তকেশীর পীঠে সাধনা করতেন সিদ্ধপুরুষরা, পুজো করেছেন রামকৃষ্ণও
শুরু হয় মাটি থেকে শিবলিঙ্গ তুলে ফেলার কাজ। কিন্তু, যতই খোঁড়াখুঁড়ি চলে, শিবলিঙ্গের তলের সন্ধান আর হেস্টিংসের লোকজন পান না। এদিকে বড়লাটের নির্দেশ বলে কথা। তা-ও অমান্য করা চলে না। তারপরও ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি করা হল। কিন্তু, কোথায় কী! এই শিবলিঙ্গের তল কোথায়, তা আর খুঁজেই পেলেন না কর্মীরা। দিনভর খোঁড়ার শেষেও যখন শিবলিঙ্গের তল খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন বড়লাট হেস্টিংসের ভুল ভাঙল। তিনি এই হিন্দু দেবতার অলৌকিক ক্ষমতা দেখে অবাক হয়ে ফিরে গেলেন।
একটি ফলকে দাবি করা হয়েছে, বাণরাজার আমলে নাকি তৈরি করা হয়েছিল এই মন্দির। গবেষকদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমনটা দাবি করা হয়েছে। এমনিতে আড়িয়াদহ শ্মশান অত্যন্ত পুরোনো। তার ঠিক পাশে এই মন্দির। তাই যে সময়েই তৈরি হোক না-কেন, সময়ের ঘাতে বারবার মন্দির নষ্ট হয়েছে। ১৯৯০ সালেই যেমন নতুন করে সংস্কার করতে হয়েছে এই মন্দির।