Advertisment

পূর্ব এশিয়ায় বাড়িতেই 'চাষ' হত গাঁজার! নয়া গবেষণায় মারাত্মক তথ্য

কীভাবে ইউরোপ-সহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এই গাছ জানুন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রতীকী ছবি

সময়টা আনুমানিক ১২,০০০ বছর আগে। নিওলিথিক সময়কালে, মারিজুয়ানা বা গাঁজা বহুমুখী ফসল হিসাবে চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত হত। এই বিষয় বলতে গেলেই, প্রথমেই বলতে হয় গাঁজার প্রভাব সম্পর্কে। বিজ্ঞানীরা ব্যক্তি সাধারণের ওপর গাঁজার প্রভাবকে মূলত “Divergent Thinking” বা বিবিধ চিন্তাভাবনা বলে সম্বোধন করেন। বৈজ্ঞানিক স্তরে এটি একটি আগাছা, তবে এর সৃষ্টি কোথায়? অনেক উদ্ভিদবিদ বিশ্বাস করেন যে, ক্যানাবিস সেটিভা উদ্ভিদটি প্রথম মধ্য এশিয়ায় জন্মায়।

Advertisment

তবে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, পূর্ব এশিয়া সম্ভবত এর সম্ভাব্য উৎস এবং উদ্ভিদের প্রজাতি বা এর জেনেটিক্স বর্তমানে চিনের এক বন্য ও চাষযোগ্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত। কৃষকরা এর চাষ শুরু করেন প্রায় ৪০০০ বছর আগে। এর মানুষের মন পরিবর্তনকারী বৈশিষ্ট্য এবং নেশাগ্রস্ত ক্রিয়াকলাপের ফলস্বরূপ দিন দিন এটি ছড়িয়ে পড়ে, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল পুরুগানান জানান, সেই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে সবকিছুই ছিল আহারের সামগ্রী। তাঁদের কাছে উদ্ভিদ মানে ছিল, সেটি আদৌ খাদ্যদ্রব্য কি না, সেই কারণ স্বরূপ তারা গাছ পুঁততেন। যদিও সেই সময় তারা ফাইবার যুক্ত খাদ্যসামগ্রী এবং মাদকদ্রব্য বা নেশার সামগ্রী নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন। সেই দিক দিয়ে বিচার করলে প্রশ্ন উঠতে পারে নিওলিথিক সভ্যতায় ঠিক কী কী গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আরও পড়ুন ক্যাডবেরিতে গো-চর্বি? আইনি পদক্ষেপ চেয়ে ট্যুইটারজুড়ে পণ্য বয়কটের ট্রেন্ড

অন্যান্য বিজ্ঞানীরা ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় জানিয়েছেন, যে গাঁজার প্রাথমিকতম রেকর্ডগুলি বেশিরভাগ চিন এবং জাপানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বেশিরভাগ উদ্ভিদবিদ মনে করেন যে, এটি সম্ভবত প্রথম মধ্য এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে ছিল, যেখানে বন্য প্রজাতির উদ্ভিদের ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। গবেষকরা নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, সর্বশেষ গবেষণার জিনগত ক্রম অনুসারে পূর্ব এশিয়ায় প্রজাতির একটি গৃহজাত উৎসের প্রভাব রয়েছে। উদ্ভিদের জিনগত নমুনাগুলি সিকোয়েন্স করে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, যে গাছগুলি সম্ভবত নিওলিথিক সময়কালের মধ্যে লাগানো হয়েছিল।

সুইজারল্যান্ডের জীববিজ্ঞানী ও জেনেটিক্সে বিশেষজ্ঞ লুকা ফুমাগল্লি বলেছেন, মধ্য এশীয় উৎসের তত্ত্বটি মূলত সেই অঞ্চলের বন্য নমুনাগুলির পর্যবেক্ষণমূলক তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে। ফুমাগল্লি জানিয়েছেন, ফেরাল নমুনা খুঁজে পাওয়া সহজ তবে এগুলি বুনো ধরনের গাছ নয়। এগুলি এমন গাছপালা যা সহজেই আগাছা হিসেবে চারিদিক ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষণায় নির্দেশনা দেন লানঝিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ রেন গুয়াংপেং। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, মারিজুয়ানার প্রাথমিক উৎস চিন প্রদেশের উত্তর পশ্চিমাংশ। গবেষণাটি পরিচালনার জন্য সর্বমোট ৮২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় গোটা বিশ্বে। এর বীজ বা পাতা থেকে স্ট্রেন সংগ্রহ করে এর উৎপাদন ক্ষমতা এবং প্রজনন বিষয়ক নানান তথ্য উঠে আসে।

আরও পড়ুন ৩৬ বছর পর ফের স্বাদ বদল করছে Coca-Cola, গভীর সংশয়ে গ্রাহকরা

এরপর ফুমাগল্লি এবং তাঁর সহকর্মীরা ল্যাবে নমুনাগুলি থেকে জিনোমিক ডিএনএ টেস্ট করেন এবং সেগুলোকে সিকোয়েন্সের মাধ্যমে পুনরায় সংযুক্ত করেন। যার থেকে জানা যায়, বন্য প্রজাতির গাঁজা গাছগুলির সূত্রপাত কোনও গৃহের বীজ বপনের মাধ্যমেই হয়েছিল এবং চিনের বিদ্যমান প্রজাতিগুলো এই নমুনাগুলির সমগোত্রীয়।

উদ্ভিদের বিবর্তন অধ্যয়নরত মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল গবেষক ক্যাথরিন রুশওয়ার্থ মনে করেন, গবেষণার প্রথম ধাপেই কোনও উদ্ভিদ ঘরোয়া না বনজ তার সম্পর্কে জানতে পারা বেশ কঠিন। কোনও উদ্ভিদ বা তার প্রজাতি এবং তার বেড়ে ওঠার বিষয়ে কিছু ধারণা বিজ্ঞানীদের থাকতে পারে। তা সত্বেও প্রাকৃতিক নানান প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে মানুষ দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

lifestyle Cannabis Marijuana
Advertisment