মহামতি চাণক্য। তাঁর পরিচয় তিনি নিজেই। তিনি ছিলেন এমন এক পণ্ডিত, যিনি জীবনকে বাস্তবোচিত দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে, বাতলে দিয়ে গিয়েছেন কী করা উচিত আর উচিত না, সেই পথ। জীবনের এমনই নানা দিক তিনি তুলে ধরেছেন নিজের লেখা নীতিশাস্ত্রে। তেমনভাবেই চাণক্য বলে দিয়ে গিয়েছেন, অর্থ রোজগারের পথ। বিশেষ করে ভিনরাজ্য বা ভিনদেশে গিয়ে যাঁরা রোজগারের স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য চাণক্য বাতলে দিয়েছেন রোজগারের উপায়।
তিনি বলেছেন, 'কুদেশমাসাদ্য কুতোহর্থসঞ্চয়ঃ, কুপুত্রমাসাদ্য কুতো জলাঞ্জলিঃ। কুগোহিণীং প্রাপ্য গৃহে কুতঃ সুখম্, কুশিষ্যমধ্যাপয়তঃ কুতো যশঃ।।' যার বাংলা অর্থ- কুদেশে গেলে কী কর্মে অর্থ সঞ্চয় হবে? কুপুত্র লাভে নিজের ভবিষ্যৎ কি ভালো হবে? স্ত্রী বা স্বামী যদি অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে কি সুখ আসা সম্ভব? যে ছাত্র সম্মান করে না, তাকে শিক্ষা দিয়ে কি শিক্ষকের কোনও যশলাভ হয়?
চাণক্যের এই সব কথার অর্থ হল- মানুষ তখনই সঞ্চয় করতে পারে, যখন জীবনধারণের প্রয়োজন মেটানোর পরও তার ব্যয় কম হয়। এই সঞ্চিত অর্থই মানুষের ভবিষ্যতের কাজে লাগে। কিন্তু, যদি কুদেশে বা নিজের দেশ ছেড়ে মানুষ এমন দেশে যায়, যেখানে আর্থিক স্থিরতাই নেই। অথবা, সেখানে থাকাকালীন নিজের দেশ থেকে প্রয়োজনের অর্থ সেই ব্যক্তিকে যদি সঞ্চয় করতে হয়, তবে সেখানে বা সেই রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে লাভটা কী? তাছাড়া ঘর ছেড়ে বাইরে কোথাও থাকলে খরচা অনেক বেড়ে যায়। তখন সঞ্চয়ের সম্ভাবনা এমনিতেই কমে যায়। তাই যথেষ্ট রোজগার হবে, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরই ভিনরাজ্য বা বিদেশে কাজ করতে যাওয়া উচিত। এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন চাণক্য।
আরও পড়ুন- একজন কুসন্তান থাকলেই গোটা পরিবার কলঙ্কিত হয়, বলে গেছেন চাণক্য
পাশাপাশি তিনি বলেছেন, যে সন্তান বাধ্য নয়, মা-বাবাকে দেখে না, এমন সন্তানের প্রতি অকারণে স্নেহ বিলিয়ে লাভটা কোথায়? আগে সন্তানকে ভালো মানুষ হতে শেখানো দরকার। তেমনই ছাত্র বা ছাত্রীর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সত্যি। শিক্ষক নিজের মত করে তাঁর ছাত্র বা ছাত্রীকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে চাইলেন। এজন্য নিজের কথা না-ভেবে তাঁকে উপযুক্ত শিক্ষা দিলেন। আর, সেই ছাত্র বা ছাত্রী কাজ মিটে গেল, শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা দূর, তাঁর নিন্দা করে বেড়াতে লাগলেন। অথবা, অন্য কোনও শিক্ষকের প্রশংসা করতে লাগলেন। এমন ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করেও বা লাভটা কী? একথাও বোঝাতে চেয়েছেন চাণক্য।
পাশাপাশি, তিনি মুখ খুলেছেন দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়েও। সফল মানুষ, সুন্দর মানুষকে জীবনের সঙ্গী হিসেবে পেতে সকলেই চায়। কিন্তু, সেই মানুষটি অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাহলে, এমন মানুষকে জীবনসঙ্গী করে লাভ কী? এই প্রশ্নও তুলেছেন কৌটিল্য চাণক্য।