ওরা তখন আপন মনে খেলছিল। বড়দিনের শহরে ফুটপাথে তেমন ভিড়ও ছিল না। হঠাৎই ওরা দেখল তাঁকে। লাল টুপি, ইয়া বড় সাদা দাড়ি, লাল-সাদা পোশাক, পিঠে সেই গিফটের ঝুলি। আরে, এ তো স্যান্টা ক্লজ! ব্যস, স্যান্টাকে দেখে কচিকাঁচাদের সে কী আনন্দ! "স্যান্টা ক্লজ এসেছে, স্যান্টা ক্লজ..." বলে কেউ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল। আবার কেউ গাইতে শুরু করল, "জিঙ্গল বেলস, জিঙ্গল বেলস।" বড়দিনে এমন একটুকরো ছবিই ধরা পড়ল শহর কলকাতায়।
সেন্ট্রাল এলাকায় স্যান্টা ক্লজকে দেখে যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না ওই পথশিশুদের। কেউ কেউ স্যান্টার দাড়িতে হাত দিল। কেউ আবার টুপি ধরে টানল। তারপর স্যান্টার ঝুলি থেকে যখন একঝাঁক চকোলেট বেরোল, খুশি আর বাঁধ মানল না। চকোলেট খেতে খেতে ওরা দিব্যি গল্প করল স্যান্টার সঙ্গে। শহরের আর পাঁচটা বাচ্চা যখন বাবা-মা'র হাত ধরে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, নিক্কো পার্কে হুল্লোড় করছে, তখন ওরা সেই জ্যান্ত স্যান্টা ক্লজের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করে বড়দিন উদযাপন করল।
বড়দিনে শহরে সান্তাক্লজের হঠাৎ দেখা, আনন্দে মাতল খুদেরা।#Christmas #Kolkata pic.twitter.com/3bTimjGV14
— IE Bangla (@ieBangla) December 25, 2018
কিন্তু কে এই স্যান্টা? নাম রোহিত কুমার ওঝা। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (আর্টিকল্ড)। এই যুবকই স্যান্টা ক্লজ সেজে বড়দিনে কচিকাঁচাদের মুখে হাসি ফোটালেন। খুদেদের সঙ্গে বড়দিন কাটিয়ে উচ্ছ্বসিত রোহিতও। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, ''দারুণ লেগেছে, খুব আনন্দ করেছি। ওরা খুব মজা করেছে।''
হঠাৎ এমন আইডিয়া কেন? রোহিতের জবাব, ''কখনও এমন ভাবে বড়দিন কাটাইনি। এবার হঠাৎই ভাবলাম যদি স্যান্টা ক্লজ সেজে বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাই, হয় তো ওরা মজা পাবে। এরপরই স্যান্টা ক্লজের পোশাক কিনি। আমার রুমমেট আমনকে সঙ্গে করে ওই এলাকায় যাই। গিফট হিসেবে চকোলেট দিই। খুব আনন্দ পেয়েছে ওরা।''
আরও পড়ুন: সন্তানরা দূরে, সান্তা সেজে শহরে বড়দিন উদযাপন ‘বুড়ো’দের
তবে সেন্ট্রাল এলাকার ওই পথশিশুরা রোহিতকে ভাল করেই চেনে। প্রথমে স্যান্টা ক্লজের বেশে রোহিতকে চিনতে না পারলেও, কাছে যেতেই ওরা ওদের 'স্যার'কে চিনে ফেলে। এ প্রসঙ্গে রোহিত বললেন, "আমি আসলে 'অ্যাডোর ইন্ডিয়া' নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করি। আমরা ওই এলাকায় ওদের পড়াতে যাই। সেইসূত্রে ওদের চিনি। তবে স্যান্টা সেজে বড়দিনের সেলিব্রেশনের আইডিয়াটা আমার নিজস্ব।" এরপরই রোহিত হেসে বললেন, "ওরা প্রথমে চিনতে পারে নি, আমায় দেখে 'জিঙ্গল বেলস' গাইছিল, তারপর যখন চিনে ফেলল, তখন বলে, 'স্যার আইয়ে, আপকা দাড়ি অ্যায়সা কিঁউ হো গয়া?'"
সান্তা সেজে কচিকাঁচাদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছেন রোহিত। পরের বারও কি এমন কিছু পরিকল্পনা থাকছে? একরাশ উচ্ছ্বাসের সুরে রোহিত বললেন, "হ্যাঁ, আবার এমনভাবেই করব।"