গত দু'দিন ধরে টিভি-তে, খবরের কাগজে, পাড়ার আড্ডায়, অফিসে একটাই আলোচনা- গ্রেটা থুনবার্গ। কী অসম্ভবটাই না করে দেখালো ১৮ বছরের মেয়েটা। মুখের ওপর রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশের নেতাদের জবাব দিয়ে গ্রেটা জানিয়েছে, "তোমরা আমার শৈশব ছিনিয়ে নিয়েছ"। সারা বিশ্বের মানুষ এখন যাকে অস্বীকার করতে পারছে না, তার নাম গ্রেটা। শুধু পরিবেশকে বাঁচাবে বলে স্কুল পালিয়ে প্রতিবাদ গড়েছে মেয়েটা। সবাই গ্রেটা হবে, তার কোনও মানে নেই। তবে গ্রেটা যে পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে, সেরকম একটা পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে হবে তো আগামী প্রজন্মকে। আর আপনার সন্তানকেও করে তুলতে হবে সংবেদনশীল।
তবে দিনের শেষে ঘুমোতে যাওয়ার আগেই এই পৃথিবীর কাছে নিজেদেরকে দায়বদ্ধ মনে করেন যারা, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ মনে করেন , তারা জেনে রাখুন সব ঘটনার প্রতিবাদ সেই স্থানে গিয়ে করা যায় না, কিন্তু প্রতিবাদ শুরু হতে পারে আপনার ঘর থেকেও। অ্যামাজন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে, আপনার কি কিছুই করার নেই? প্রকৃতির কাছ থেকে শুধু না নিয়ে প্রকৃতিকে কিছুই কে ফিরিয়ে দিতে পারিনা আমরা? আমরা যদি নাও পারি ফিরিয়ে দিতে শেখাতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
আরও পড়ুন, শ্বাস নিতে নিতেই রোজ ‘খারাপ’ হচ্ছে আপনার মন! জানেন কী ভাবে?
কীভাবে করবেন সেই কাজ জেনে নিন।
আপনার সন্তান, সন্তানসম, সন্তানতুল্য যে কাউকে যখনই সময় পাবেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখাবেন। প্রতিটা গাছ, প্রতিটা প্রাণী, আকাশ-মাটি-জল সবকিছুকে নিয়ে একসাথে থাকতে শেখাবেন এটা আপনার অবর্তমানে আপনার প্রজন্মের অবর্তমানে আপনার সন্তান অথবা সন্তানের বন্ধু সে হয়তো কখনো প্রতিবাদ গড়ে তুলবে যদি প্রকৃতির সাথে অন্যায় হয়।
সবুজ ভালবাসতে শেখান সন্তানকে
বাড়ি যতই ছোট হোক অথবা ফ্ল্যাট হোক, চারাগাছ পুতবেন। সবুজের প্রতি যেন একটা টান তৈরি হয় আপনার সন্তানের। আপনি আপনার সন্তানকে শেখালে সে তার স্কুলে পাড়ায় বন্ধু-বান্ধবদের শেখাবে। এভাবেই বদলায় সমাজ বিশ্বাস করুন। বাড়িতে গাছ পুতুন, দু’বেলা জল দিতে শেখান। গাছেদের জন্য ভাবতে শেখান।
ফুল ছিঁড়তে উৎসাহিত করবেন না
আপনার সন্তানকে খুব দরকার না পড়লে ফুল তুলতে উৎসাহিত করবেন না। আপনার সন্তানকে বোঝান ফুলদানিতে ফুল মানায় ভালো, কিন্তু এদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা গাছই।
যে কোনও অনুষ্ঠানে গাছ উপহার দিন
জন্মদিন উদযাপন অথবা যে কোনো উল্লেখযোগ্য দিনকে মনে রাখার মতো করে তুলতে বাড়িতে গাছ আনুন। পরিবারের সদস্যদের গাছ উপহার দিন নিয়ম করে। তবেই ছোটবেলা থেকে আপনার সন্তান গাছকে পরিবারের সদস্য মনে করবে।
প্রকৃতিকে কিছু ফিরিয়ে দিতে শেখান
সম্প্রতি আপনার পরিবারের ক্ষুদে সদস্য টি কে নিয়ে লাইন কিং দেখতে গিয়েছেন নিশ্চয়ই। সিম্বার বাবাকে মনে পড়ছে তো ? সিম্বা যখন প্রথম তাদের রাজত্ব চিনতে শিখল, তার বাবা তাকে কি বলেছিল? ” রাজত্ব সামলানোর সময় চিন্তা করতে হবে, তোমার প্রজাদের কে কী দিতে পারবে, তাদের থেকে কী নিতে পারবে তা নয়। এমন করেই আপনার সন্তানকে বোঝান এই প্রকৃতি মাকে কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। অনেক নিয়েছি আমরা, এবার ফিরিয়ে দেবার পালা। ওকে বুঝতে শেখান এই পৃথিবী যেমন আমার, আপনার, আপনার সন্তানের, ঠিক ততটাই সবুজ বনের ।মাঠের গাছের ফুলের ফলের পাখিদের রাস্তার।
সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান সবুজের সমারোহে
ছুটির দিনে সন্তানের সঙ্গে বাগানে গিয়ে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করুন, গাছের যত্ন নিন। শিশুর ছোটবেলা থেকে যেন দেখে, তার বাবা-মা তার প্রতি যতটা যত্নশীল, বাড়ির গাছেদের প্রতি ঘরের কোণে রাখা ক্যাকটাসের প্রতি, ছাদে উঠে আসা মানিপ্লান্টের প্রজাপতির প্রতি, ঘরে ভুল করে ঢুকে পড়া ছাতার পাখিটার প্রতি একই রকম যত্নশীল সহানুভূতিশীল।