ওঁদের দশহাত নেই ঠিকই। কিন্তু ওঁদের দু’হাতেই এ শহরে বহু ইভটিজার ‘বধ’ হয়েছে গত তিন মাসে। মা দুগ্গার মতো ওঁদের ‘ত্রিনয়ন’ নেই। তবুও ওঁদের সজাগ দৃষ্টি ও তীক্ষ্ণ নজর থেকে এক পলকের জন্য আড়াল হয় না কোনও এলাকা, সে ভিক্টোরিয়া চত্বর হোক বা ময়দান, কিংবা শহরের কোনও শপিং মল। শ্লীলতাহানি কিংবা ইভটিজিং, এমন অভিযোগ পেলেই ওঁরা ওঁদের দু’চাকার বাহন নিয়ে সোজা পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। তারপর, অসুররূপী সেই ইভটিজারদের পাকড়াও করেন। ওঁরা কলকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা বাহিনী, নাম ‘দ্য উইনার্স’।
পরনে সাদা রঙের উর্দি, পুলিশি মেজাজ...২৪ জনের দলে সকলেই মহিলা। এ যেন নারীশক্তির এক অনন্য নিদর্শন। গত জুলাই মাসে কলকাতার রাজপথে স্কুটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন কলকাতা পুলিশের ওই মহিলা দল। কেটে গিয়েছে তিন মাস। অনেক ইভটিজাররাই ধরা পড়েছে এঁদের হাতে। এঁদের সম্পর্কে অতিরিক্ত ডিসি (সাউথ) অপরাজিতা রাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "শহরে অপরাধ দমন করতেই এঁদের নামানো হয়েছে।" তিনি আরও বললেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই ইভটিজিং বা শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলে মহিলারা পুরুষ পুলিশকর্মীর কাছে খোলাখুলি সব বলতে পারেন না। এক্ষেত্রে, এঁদের স্বচ্ছন্দে সবটা জানাতে পারবেন।
আরও পড়ুন, কেমন ছিল ‘দ্য উইনার্স’-এর প্রথম দিনের শহর পরিক্রমা?
বলাই বাহুল্য, পুজোতে এঁদের ছুটি নেই। দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন আর পাঁচজন কলকাতা পুলিশকর্মীর মতোই। পুজো প্যান্ডেলে বা পুজোর ভিড়ে শহরে ইভিটিজারের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এঁরা সবসময় তৎপর থাকবেন। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিসি (সাউথ) বললেন, "পুজোর সময়ও এঁরা কাজ করবেন, অবশ্যই।" কলকাতা পুলিশের এহেন বাহিনী সমাজের কাছে তো একটা দৃষ্টান্ত! অপরাজিতার কথায়, "ওঁরা শহরের মহিলাদের চলন্ত হেল্পলাইন।"
রোজই যেভাবে নারী নির্যাতনের খবর শিরোনামে উঠে আসছে, সেখানে এ শহরের রক্ষাকবচদের এমন ভাবনাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। নারী সুরক্ষায় জোর দিতে কলকাতা পুলিশের এই মহিলা ব্রিগেড নিঃসন্দেহে যেন এক 'দুর্গা বাহিনী'। অপরাজিতা মা দুর্গার সঙ্গে এমন তুলনার পক্ষপাতি নন। তাঁর কথায়, "ওঁরা ওঁদের কাজ করছেন।" আমাদের মতে, মা দুর্গাও কার্যত তাই করেছিলেন।