ভোর হতেই কানে বাজবে, "রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দিশো যহি।" বঙ্গজীবনে মহালয়া এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সমার্থক। এই নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই, কোনও কালেই ছিল না। মহানায়ক উত্তম কুমার একবার মহালয়ায় রেডিওতে চন্ডীপাঠ করেছিলেন। বিদ্বজন থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের তীব্র ধিক্কারে আর দ্বিতীয়বার সে চেষ্টা করেন নি। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জায়গা কেউ নিতে পারেন নি। সাধারন মানুষ শুধু নন, মহালয়া মানেই পন্ডিতদেরও মনে পড়ে যায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাম।
ভোরের 'মহিষাসুরমর্দিনী' অনুষ্ঠানের মতই চিরন্তন সত্য মহালয়ার ভোরের তর্পণ। কিন্তু এবছর তিলতর্পনের সময় নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। যেহেতু অমাবস্যা শুরু হচ্ছে আজ সকাল ১০টা ৪৯ মিনিটে, যেখানে সাধারণত মহালয়ার দিন ভোরেই অমাবস্যা শুরু হয়। এবার অনেকেই ভাবছেন, ভোরেই তিল তর্পন করা উচিত কী না। তবে পণ্ডিতদের মতে, ভোরে তর্পণ করা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। এক্ষেত্রেও তাঁদের বক্তব্য, ঊষালগ্নে চন্ডীপাঠ করতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, তার সঙ্গে ভোরের তর্পণের বিশেষ যোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: অশুভ শক্তির বিনাশে মহিষাসুরমর্দিনী এবার শ্রীনন্দা শঙ্কর
পন্ডিত পরমানন্দ গোস্বামীর মতে, “অমাবস্যা শুরুর সময় থেকে তর্পণ করা যেতে পারে। তবে ভোরে তর্পণ করা একটা রীতি। এমন কোনও কথা নেই যে অমাবস্যা পড়লেই তর্পণ করতে হবে। সোমবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত তর্পণ করা যেতে পারে। অন্যান্য বছর ভোরে অমাবস্যা থাকে বলে কারও মনে কোনও সংশয় থাকে না। তবে সোমবারই করে নেওয়াই উচিত। মঙ্গলবার তর্পণ করা বাঞ্ছনীয় নয়।"
প্রায় একই মত ব্যক্ত করেছেন খড়দহ হরিসভার পুরোহিত পার্থ চক্রবর্তী। পার্থবাবু বলেন, "ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে মহালয়ার অমাবস্যা পর্যন্ত তিল তর্পন করার রীতি আছে। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটছে বলে দলবদ্ধ ভাবে মহালয়ার দিন সবাই তর্পণ করেন। তবে দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার আগেই তর্পণের কাজ শেষ করা দরকার।" তাঁর মতে, "বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ভোরবেলায় ঊষালগ্নে চন্ডীপাঠ করতেন। সেই সময় তর্পণের কাজ করলে খুব ভাল। তবে মানুষের সময়ের সমস্যা থাকে। তাই ঘুম থেকে উঠে সকালে তর্পণ করতে যান। সোমবার সকাল থেকে সারাদিন তর্পণ করা যেতে পারে। রবিবারও অনেকে করেছেন। অমাবস্যার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।"