দৃশ্য ১: রোজ সকালে পড়ি কী মরি করে অফিসে ছোটেন বাপিন। ব্রেকফাস্টের থালায় বাপিনের জন্য হাজারো আয়োজন থাকে। কিন্তু রোজই পাউঁরুটি আধ-খাওয়া রেখেই ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়েন আইটি সেক্টরে কর্মরত যুবক। অগত্যা বাপিনের মায়ের হাতে বানানো অত খাবার প্রায়শই যায় ডাস্টবিনে।
দৃশ্য ২: সদ্য বিয়ে হয়েছে রেখার। স্বামীকে নিয়ে থাকেন ফ্ল্যাটে। এখনও রাতে ভাত করতে গিয়ে বুঝতে পারেন না, দু’জনের খাওয়ার জন্য কতটা চাল নিতে হবে। ফলে রোজই ভাত বেশি হয়ে যায়। সে ভাত ফ্রিজে রেখে পরের দিন খাওয়ার খুব একটা বাসনাও নেই নবদম্পতির। কাজেই পরদিন সকালে ডাস্টবিনে ভাত দেখে চোখ বড় করেন সাফাইকর্মী।
এমন দৃশ্য রোজই আকছার অভিনীত হয়ে চলেছে, রোজ কত যে খাবার অপচয় হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। কখনও ভেবে দেখেছেন, আপনার আশপাশে কত মানুষ রোজ না খেতে পেয়ে দিন গুজরান করছেন? অনেকেই আধপেটা খেয়ে কোনক্রমে বেঁচে-বর্তে রয়েছেন। আপনার বেঁচে যাওয়া খাবার যদি কোনও অভুক্ত পেটের ক্ষুধা মেটাতে পারে, তাহলে কেমন হয়? ঠিক এমন ভাবনা থেকেই কলকাতায় ফুড এটিএমের আইডিয়া খেলেছিল রেস্তোরাঁর মালিক আসিফ আহমদের মাথায়।
প্রায় ১৫ বছর ধরে কলকাতায় একটি রেস্তোরাঁ সামলাচ্ছেন আসিফ। হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও দেখেছিলেন, যেখানে দক্ষিণ ভারতের এক মহিলা রাস্তায় ফ্রিজ বসিয়ে খাবার বিতরণ করছেন। ব্যস, দেখেই আসিফের মাথায় খেলে যায় ফুড এটিএমের পরিকল্পনা। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের মাঝরাতে চার বন্ধুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কলকাতায় ফুড এটিএমের যাত্রা শুরু করলেন আসিফ আহমেদ। সিআইটি রোডে লেডিজ পার্কের কাছে আসিফের রেস্তোরাঁর সামনে বসল প্রথম এটিএম, গরীব দুঃস্থদের খাবারের জোগান দিতে শহরের অভিনব উদ্যোগ।
আরও পড়ুন: Cheap Food: পাঁচ টাকায় ভাত-ডাল-সবজি দিয়ে পেট পুজো
আর মাত্র দু’মাস বাকি, তারপরই কলকাতায় ফুড এটিএমের প্রথম বর্ষপূর্তি। কেমন চলছে ফুড এটিএম? জিজ্ঞেস করতেই তৃপ্তির হাসি খেলল আসিফের চোখে-মুখে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে আসিফ বললেন, "দারুণ সাড়া মিলেছে। প্রচুর লোক আসেন। রোজ অনেকে খেয়ে যাচ্ছেন।"
প্রথম এটিএম খোলার ঠিক একমাস বাদে, অর্থাৎ ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে, ইএম বাইপাসে বসানো হয় দ্বিতীয় এটিএম। আর এবছর পয়লা বৈশাখে মৌলালিতে রামলীলা ময়দানের কাছে বসেছে তিন নম্বর এটিএম। আসিফের কথায়, আগামী দিনে কলকাতায় একশোটি ফুড এটিএম থাকলে হয়তো কাউকেই আর না খেয়ে থাকতে হবে না। খুব তাড়াতাড়ি যে শহরের বুকে আরও এটিএম খোলা হচ্ছে, সেকথাও জানালেন আসিফ।
এটিএমে যেমন সবসময় টাকা পাওয়া যায়, তেমনই যাতে সবসময় খাবার মেলে, তাই নাম রাখা হয়েছে ফুড এটিএম। তবে আসিফের এই জনমুখী উদ্যোগ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন থাকছেই। যে খাবারগুলো এটিএমে জমা পড়ছে, সেগুলির গুণগত মান কী? আদৌ কি খাবারের মান যাচাই করা হয়? প্রশ্ন করতেই খানিকটা বিরক্তির সুরে আসিফ বললেন, "আমাদের কর্মীরা দেখে নেন খাবার ঠিক আছে কিনা। ভাল ভাবে প্যাক করেই খাবার রাখা হয়।" এ প্রসঙ্গে আসিফ আরও জানান, "যাঁরা ফুড এটিএমে খাবার সরবরাহ করেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা সব নথিভুক্ত করা হয়।" মানবিকতায় বিশ্বাসী আসিফ, তাই তিনি শেষে বলেন, "আমাদের বিশ্বাস, মানুষ ভাল খাবারই সরবরাহ করছেন এবং করবেন।"
আরও পড়ুন: Indian Railway: যথাস্থানে প্লাস্টিক ফেললেই ৫ টাকা ক্যাশব্যাক
ফুড এটিএমের মত এমন জনমুখী ও অভিনব উদ্যোগ নেওয়ায় অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য আসিফদের। কিন্তু এটিএমে সরবরাহ করা খাবারের গুণগত দিকটা নিয়ে আসিফরা আর একটু বিশদে ভাবলে হয়ত এই উদ্যোগ আরও মনোরম আকার নেবে। আর হ্যাঁ, ব্যাঙ্কের এটিএম যেমন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, ফুড এটিএম কিন্তু তা নয়, এর সময়সীমা সাকুল্যে ১২ ঘণ্টা। কাজেই আপনার হাতে অতিরিক্ত খাবার থাকলে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে যোগাযোগ করুন আসিফদের সঙ্গে।