Advertisment

লিঙ্গ বৈষম্য রুখতে এবার এসআরএফটিআই-তে জেন্ডার সেশান

কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার মেলার আয়োজন করা হয়েছিল, আর রবিবার SRFTI-তে জেন্ডার সেশান। জেন ওয়াই কি লিঙ্গবৈষম্য দূরে সরিয়ে নতুন দুনিয়া বানাতে পারবে?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
gender session, জেন্ডার সেশান

জেন্ডার সেশানের আয়োজন করল এসআরএফটিআই।

উইকএন্ড বলে সেদিন ফুরফুরে মেজাজে গোলাপি রঙের জামা পরে অফিসে গিয়েছিলেন আইটি কর্মী অনিন্দ্য। গোলাপি রঙে বেশ মানিয়েওছিল তাঁকে। কিন্তু অফিসে ঢুকতেই তাঁর জামার রঙ নিয়ে এমন সমালোচনা হল, যে বেচারার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। "এ কী রে, পিঙ্কি হয়ে এসেছিস কেন? পুরো তো লেডিজ কালার!" একথা শুনে এতটাই অস্বস্তিতে পড়তে হল ওই আইটি কর্মীকে, যে ওই জামা তো দূরস্থান, শপিং মলে গিয়ে ভুলেও গোলাপি রঙের কোনকিছুর দিকেই আর তাকান না তিনি।

Advertisment

একইরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন স্কুল শিক্ষিকা তনয়া। ছোটবেলা থেকেই নীল রঙের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা তাঁর। তাই শখের ওয়ার্ড্রোবে নীল রঙের পোশাকের ছড়াছড়ি। একজন নারীর প্রিয় রং নীল! এজন্য তাঁর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টাশনও প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়ায়।

নীল রং মানেই তা পুরুষের, আর গোলাপি মানেই নারী। রঙের আবার লিঙ্গভেদ হয় নাকি? কেন একটা ছেলের অন্নপ্রাশনের উপহারের তালিকায় বার্বি ডল জায়গা করে নিতে পারে না? এবার সমাজে এহেন লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে একটি 'জেন্ডার সেশানের' আয়োজন করল সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট।

লিঙ্গ পার্থক্য নিয়ে সমাজের ভুল ধারণা দূর করতেই এই জেন্ডার সেশানের আয়োজন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ প্রসঙ্গে SRFTI-এর কালচারাল হেড সঙ্কেত মিশ্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আজকের দিনে জাতিগত পার্থক্যও ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলে যেমন বেশ কয়েকজন কৃষ্ণ বর্ণের ফুটবলার ছিলেন। তেমনই এই সময়ে দাঁড়িয়ে লিঙ্গ পার্থক্যও ধীরে ধীরে উঠছে।" এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "একটা বাচ্চাকে প্রথম থেকেই আমরা ছেলে-মেয়ের তফাৎটা বোঝাই। ছেলে মানেই ব্যাট বল নিয়ে খেলবে আর মেয়ে মানেই বার্বি ডল। এই ফারাকটা আমরাই করে দিই। আসলে এমন ভেদাভেদের কোনও মানে নেই। লিঙ্গ নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, অনেক কনফিউশন আছে, তা নিয়ে সুস্পষ্টভাবে জানাতেই এই সেশান।"

gender session, জেন্ডার সেশান জেন্ডার সেশানের প্রধান অতিথি মেঘ সায়ন্তন ঘোষ

ফিল্ম ইনস্টিটিউটে কেন জেন্ডার সেশান? জবাবে সঙ্কেত বলেন, "বলিউড বলুন বা ভারতীয় চলচ্চিত্র, সবক্ষেত্রেই এলজিবিটি কমিউনিটিকে স্টিরিওটাইপ করে দেখানো হয়েছে। সিনেমা সমাজের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। ফলে পরিচালক-প্রযোজকরা যদি এই বিষয়কে নিয়ে ছবি বানান, তবে মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। একইসঙ্গে সচেতনতামূলক বার্তাও পৌঁছবে জনমানসে।''

আরও পড়ুন, তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে সচেতনতায় ‘জেন্ডার মেলা’, সৌজন্যে প্রেসিডেন্সি

জেন্ডার সেশানের গুরুত্ব কতটা? জবাবে SRFTI-এর জেন্ডার সেশানের প্রধান অতিথি তথা রূপান্তরকামী আইনজীবী মেঘ সায়ন্তন ঘোষ বলেন, ''আজকের সময়ে খুবই দরকার এধরনের সেশানের। সমাজে সবরকমের লিঙ্গের মানুষদের সমান গুরুত্ব দেওয়া দরকার। স্কুল-কলেজে, সমাজের সর্বস্তরে এ নিয়ে সচেতনতা জরুরি।'' মেঘ সায়ন্তনের মতোই একসুরে সঙ্কেত বললেন, ''স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।'' জেন্ডার সেশানের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়লে সমকামী, রূপান্তরকামীদের নিয়ে কি টিটকিরি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ কমবে? জবাবে মেঘ সায়ন্তন বললেন, ''আমার মনে হয় না মানুষ সচেতন হলেই এসব থেকে বিরত থাকবেন। এটা আসলে মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। তবে হ্যাঁ, সচেতনতার ফলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ খানিকটা তো কমবেই।''

কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার মেলার আয়োজন করা হয়েছিল, আর রবিবার SRFTI-তে জেন্ডার সেশান। জেন ওয়াই কি লিঙ্গবৈষম্য দূরে সরিয়ে নতুন দুনিয়া বানাতে পারবে? এর উত্তর সময়ই দেবে।

gender equality
Advertisment