আগেকার দিনে ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা দেবী কালীর কাছে পুজো দিতেন। বাংলার ডাকাতদের ইতিহাস ঘাঁটলে বহু জায়গাতেই এমন নজির পাওয়া যাবে। শুধু তা-ই নয়, সেই সব কালীপুজো আজও চালু আছে। সেই ডাকাতরা আজ আর নেই। কিন্তু, স্থানীয় বাসিন্দারা পুজোগুলো চালু রেখেছেন। কারণ, তাঁদের বিশ্বাস যে ওই সব মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। যেখানে গিয়ে দেবীর কাছে মানত করলে, তা পূরণ হয়। তেমনই এক মন্দিরের কথা বলতে এই প্রসঙ্গ টানা হল। তবে, এ কোনও কালী মন্দির নয়। এই মন্দির দেবী দুর্গার। বলা ভালো, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ডাকাতদুর্গা মন্দির।
দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দ্দিনী দুর্গা। নিমকাঠের তৈরি এই দেবীমূর্তি তৈরি করেছিলেন ডাকাতসর্দার নিজেই। যাঁর নামে জমিদাররা তো বটেই, নবাবের বাহিনীও কাঁপত। এই দেবীমূর্তি সেই চিত্তেশ্বর বা চিতে ডাকাতের হাতে তৈরি। বর্তমানে যেখানে স্ট্যান্ড রোড, সেই সময় ওই জায়গা দিয়েই বইত হুগলি নদী।
তার পাশে ছিল জঙ্গলভরা এলাকা। যেখানে ছিল চিতে ডাকাতের ডেরা। কথিত আছে, হুগলি নদী দিয়ে বয়ে এসেছিল প্রকাণ্ড নিমকাঠ। সেই কাঠ দিয়েই ডাকাত সর্দার চিত্তেশ্বর তৈরি করেছিলেন শ্রীশ্রী জয়চণ্ডী চিত্তেশ্বরী দুর্গার মূর্তি। যাঁর নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয় চিৎপুর। কথিত আছে, চিতে ডাকাতের মৃত্যুর পর এই জায়গায় পুজো বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- অনেকেরই তো নাম ছিল, দেবীর নাম হঠাৎ দুর্গা হতে গেল কেন?
পরে সেখানে এসে দেবীর মূর্তি উদ্ধার করেন নৃসিংহ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক। সময়টা ছিল ইংরেজির ১৫৮৬ সাল। মুর্শিদাবাদের কুলাই গ্রামের জমিদার মনোহর ঘোষ ওই ব্রহ্মচারীকে মন্দির চালানোর জন্য ভূসম্পত্তি দান করেছিলেন। এছাড়া শেওড়াফুলির রানিও কিছু সম্পত্তি দান করেন। সপ্তদশ শতকে রচিত মঙ্গলকাব্যেও চিৎপুরের এই দুর্গাপুজোর উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা আছে, 'চিৎপুরে পূজে রাজা সর্বমঙ্গলা/নিশি দিশি বাহে ডিঙা নাহি করে হেলা।' নৃসিংহ ব্রহ্মচারীর পর এই পুজোর দায়িত্ব বর্তায় তাঁর শিষ্য রামনৃসিংহ ব্রহ্মচারীর ওপর।
পরবর্তীতে রামনৃসিংহের শিষ্য ক্ষেত্র ব্রহ্মচারী এই পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন। ক্ষেত্র ব্রহ্মচারী বিয়ে করে সংসারী হন। তাঁর বড় মেয়ে যদুমণির বিয়ে হয় এক বৃদ্ধের সঙ্গে। ছোট ক্ষেত্রমণির বিয়ে হয় বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবারে। পরবর্তীতে রায়চৌধুরী পরিবারই এই দুর্গা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই মন্দিরের ঠিকানা ৯, খগেন চ্যাটার্জি রোড। কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল কারখানার ঠিক পাশে। কথিত আছে দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। অজস্র ভক্ত দেবীর কাছে গিয়ে মানত করে উপকৃত হয়েছেন।