অলৌকিক কার্যকলাপ ভারতীয় হিন্দু মন্দিরগুলোকে অন্যান্য ধর্মস্থান থেকে পৃথক করেছে। হিন্দু ধর্মস্থানগুলোকে আলাদা বিশেষত্ব দিয়েছে। সেই ঐতিহ্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরও বহন করে চলেছে। যেখানে বর্তমান অতি আধুনিক যুগেও অলৌকিক কাণ্ডকারখানা ঘটে থাকে। অন্তত, এমনটাই দাবি ভক্তদের। এমনই এক মন্দির রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের তোরিয়ায়। নাম হঠনাগর শিব মন্দির। যেখানে প্রতিদিন অলৌকিক ঘটনাবলির সাক্ষী হন ভক্তরা।
কী সেই অলৌকিক ঘটনা? আসলে শিব মন্দিরগুলোয় ভগবান শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালা এক অতি প্রাচীন রীতি। হঠনাগর শিব মন্দিরও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে শিবলিঙ্গ মাটি ভেদ করে উঠেছে। প্রতিদিন অজস্র ভক্ত সেই লিঙ্গে জল দেয়। কিন্তু, জল দাঁড়ায় না। প্রায় মুহূর্তেই কোথায় যেন চলে যায়। শিবের গর্ভগৃহ, স্বভাবতই সেখানে কোনও নিকাশির ব্যবস্থা নেই। আর তাতেই ভক্তদের প্রশ্ন, জল যায় কোথায়? এটা জানতে বহুবার পরীক্ষা হয়েছে। আশপাশের পুকুরগুলোর জল শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু, শিবলিঙ্গের জল যে কোথায় যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করা যায়নি।
গর্ভগৃহে ভগবান শিবের জন্য ভক্তদের আনা ফুল বেলপাতা পড়ে। ভক্তদের দাবি, সেই ফুল-বেলপাতা সরাতে গিয়ে তাঁরা স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে সেখানে জ্যান্ত সাপ রয়েছে। কিন্ত, সেই সাপকে বাইরে থেকে দেখা যায় না। ফুল, বেলপাতা সরাতে গিয়ে সেই সাপেদের শরীরে হাত পড়লেও, তারা নাকি কামড়ায় না। আর, তাতেই ভক্তদের বিশ্বাস সেই সাপ আসলে মহাদেবের সঙ্গী। সেই কারণেই গায়ে হাত পড়লেও তাঁদেরকে কামড়ায় না।
ঠিক কবে, এই মন্দির তৈরি হয়েছে? এই তথ্যও তোরিয়া অঞ্চলের কেউ বলতে পারেন না। অতি প্রবীণ ব্যক্তিরাও জানিয়ে দেন, এই মন্দির ছোট থেকে দেখছেন। তাঁদের বাবা বা পূর্বপুরুষদের থেকে জেনেছেন, এই মন্দির ওই অঞ্চলে বরাবরই ছিল। আগে ছিল মাটির। সেটাই এখন পাকা হয়েছে। এখন এই মন্দির যে চত্বরে, সেটা তোরিয়া হাইস্কুল। স্কুলের চার দেওয়ালের মধ্যে এই মন্দির। স্কুল তৈরি হওয়ার আগে থেকে মন্দির থাকায়, তা ভাঙা যায়নি।
আরও পড়ুন- যে মন্দির থেকে মহারাজা কংসনারায়ণ বাংলায় দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন
শুধু কি তাই? সরকার পরিপোষিত স্কুল। কিন্তু, তার চত্বর থেকে বের হওয়ার একটা দরজা দিনরাত খুলে রাখা হয়। কারণ, ভক্তদের বিশ্বাস রাতে এখানে ভগবান শিব স্বয়ং ঘোরাফেরা করেন। দেবীর কাছে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভগবান শিবের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা। দিন তো বটেই, সারারাত খুলে রাখা হয় স্কুল চত্বরে প্রবেশের দরজা। পাশাপাশি, একই কারণে রাতে এই মন্দির এবং স্কুলে নিভিয়ে রাখা হয় আলো।