করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনও রয়েছে। ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে তৃতীয় ঢেউ। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ সময়কালে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেআব্রু চিত্র উঠে এসেছে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যে অক্সিজেন সংকট প্রবল ভাবে দেখা দিয়েছে। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুও। অনেকে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারাও গেছেন। সম্প্রতি ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট এবিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ল্যানসেটের রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী দুসপ্তাহ অর্থাৎ ১৪ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ১৪ দিনেই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন এমন অনেক ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে করোনা থেকে সেরে ওঠার পর স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু হয়েছে অনেকেরই। এ প্রসঙ্গে প্রবীণ সাংবাদিক রোহিত সারদানার প্রসঙ্গ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। যিনি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং যে কারণে তিনি মারা যান।
ল্যানসেটের দাবি, 'করোনা থেকে সেরে ওঠার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকগুণে বেশি থাকে। করোনা ক্রমাগত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তী ঢেউ হিসেবে অতিমারী আসার সতর্কতাও জারি করা হচ্ছে। এদিকে, প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট সম্প্রতি যে রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী ১৪ দিন বা দুসপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়কালেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে সবথেকে বেশি। প্রায় তিনগুণ বেশি সম্ভবনা থাকে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের
আরও পড়ুন স্টিভ জোবসের প্রথম চাকরির আবেদনপত্র নিলামে! দর কত উঠল জানেন?
ল্যানসেটের তরফে যে রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে তাতে সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ গবেষক ওসভালদো ফনসেকা রদ্রিগেজ দাবি করেন, করোনা পরবর্তী ১৪ দিনে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি তিনগুণ বৃদ্ধি পায়, সুইডেনে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৮৬,৭৪২ জন করোনা আক্রান্তের ওপর গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন এবং স্ট্রোক যেমন কোমর্বিডিটিস, বয়স, লিঙ্গ এবং আর্থ-সামাজিক কারণগুলির জন্য পরিচিত ঝুঁকির কারণগুলির জন্য পৃথক ভাবে তাঁদের গবেষণা চালান, তারপরেও দেখা যায় সবক্ষেত্রেই ঝুঁকি একই। করোনা পরবর্তী সময়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো ঘটনা কোভিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল প্রকাশকে প্রতিনিধিত্ব করে বলেন, উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সহ-গবেষক ইওয়ানিস ক্যাটসুলারিস।
ক্যাটসুলারিস বলেন, কোভিড থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র অস্ত্র টিকা। তিনি এবিষয়ে সকলেই টিকা নেওয়ার কথা বলেন। করোনা পরিস্থিতিতে টিকার কার্যকারিতার কথা এর আগেও উঠে এসেছে আলোচনায়। সম্প্রতি ল্যানসেট পত্রিকায় যে গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানেও টিকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়। ক্যাটসুলারিস আরও বলেন, বিশেষ করে বয়স্করা যারা তীব্র কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে টিকা অতন্ত্য প্রয়োজনীয়। গবেষকরা গবেষণায় দুটি পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন একটি সমষ্টিগত গবেষণা এবং অপরটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত কেস সিরিজ। গবেষকরা বলেন, স্ব-নিয়ন্ত্রিত কেস সিরিজ স্টাডি হল এমন একটি পদ্ধতি যা মূলত ভ্যাকসিনের পরে জটিলতার ঝুঁকি নির্ধারণের দিক নির্দেশ করে। তাঁদের এই রিসার্চ অনুযায়ী যে দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল, উভয় পদ্ধতি অনুসারেই উঠে এসেছে কোভিড ১৯ পরবর্তী দুসপ্তাহ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই পরিস্থিতিতে করোনা পরিক্ষা এবং টিকাদান এই দুয়ের ওপর জোর দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে আসন্ন তৃতীয় ঢেউ রুখতে টিকাদান এবং আরটিপিসিআর টেস্টের ওপর বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে গবেষণায়। গবেষণায় কোভিড প্রোটোকল মেনে চলার এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশেষ চিকিৎসার উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন