Advertisment

বাড়ির ছোটদের সঙ্গে কী ভাবে কাটাবেন বড়দিন?

সন্তানের মধ্যে খেলার সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি সচেতনতা যেন না আসে। ফ্লুরিজ, নাহুমস এর পাশাপাশি শহরের ছোট বেকারিগুলোর স্বাদ পাক আপনার সন্তান আর ওর বন্ধুরা। ব্র্যান্ড সচেতন হয়ে ওঠা কাটান সচেতন ভাবেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আজকাল বেশির ভাগ পরিবার নিউক্লিয়ার। মা-বাবা-আর বাড়ির এক এবং একমাত্র খুদে সদস্যকে নিয়ে সুখী সংসার। বড়দিনের সময়টায় বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যায় অধিকাংশ স্কুলেই। তারপর লম্বা ছুটি। বদলে যাওয়া সময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের বাচ্চাদের এই ডিসেম্বরজুড়ে পরীক্ষা থাকে, উইক এন্ডে শপিং মল থাকে, শারদীয়ার ব্যস্ততায় একটু আধটু বাদ পড়া ক্যারাটে ক্লাস আর টিউশন থাকে। এটাই এই প্রজন্মের প্রাক বড়দিনের স্বাদ, একা একা কাটানো শৈশবের হেমন্ত বিকেল। অথচ দু’দশক আগেও মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনে শীতকাল আসত অনেক হৈচৈ, খাতার নীচে লুকিয়ে রাখা ভূতের গল্প, ছোট খাটো বেকারি থেকে ভেসে আসা কেকের গন্ধ, ঝুপ করে নেমে যাওয়া সন্ধে। সেই আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে আধুনিক জীবনে।

Advertisment

কিছুদিন আগেও শহর মফঃস্বলে বেড়ে ওঠা সবুজ মন গুলো বড়দিন এলেই ভাবত, “আজ হাসি খুশি মিথ্যে হবে, তোমাকে বাদ দিয়ে”। ক্রমশ গতি বাড়তে থাকা, প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকা শৈশব আজ সেই সুর থেকে মুখ ফিরিয়েছে। আপনার সোনালি দিন গুলো কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না আপনার সন্তানের শৈশব-কৈশোরে? উৎসবের মরশুমে অন্তত একটু অন্যরকম করে তুলুন ওর কচি মনটুকু।

আরও পড়ুন, সন্তান উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে, বুঝবেন কীভাবে?

উৎসবের কটা দিন পরিবারের সবাই একসাথে কাটান

বড় পরিবারে, কাকা জেঠু, মাসি-পিসিরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন দেশে বিদেশে। উৎসবের দিনগুলোতে কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ফ্যামিলি গেটটুগেদারের ব্যবস্থা করুন। দশটা-পাঁচটার অফিস করে হাঁপিয়ে ওঠা মা বাবারা শুধু নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাবেন ভেবেছিলেন? খবরদার সেটি করবেন না। সন্তানের সঙ্গে আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের টান তৈরি করতে হবে। এই সময় স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারি থাকে না, তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। আর কাউকে কাছে না পেলেও খেয়াল রাখুন দাদু-দিদা অথবা ঠাকুরদা ঠাকুমা স্থানীয় মানুষকে যেন কাছে কাছে পায় আপনার সন্তান।

ব্র্যান্ড সচেতনতা যেন না আসে আপনার বাচ্চার মধ্যে 

আপনার একরত্তি সন্তান যে খুবই আদরে মানুষ হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বৈভব কী, ছোট থেকেই তার সম্পর্কে যেন সচেতন না হয় আপনার ছেলে অথবা মেয়ে। দিন পনেরোর ছুটিতে পাড়ার সব কচিকাঁচার সঙ্গে মিশতে দিন ওকে। আনন্দ ভাগ করে নিতে দিন সবার সঙ্গে। ওই ৫ টা দিন বাড়িতে থাকুক আপনার সাঙ্গপাঙ্গদের অবাধ আনাগোনা। আর কার পোশাক কত দামি, অথবা সস্তা, সেই বোধ যেন তৈরি না হয় আপনার বাড়ির খুদেটির মধ্যে। বছরের অন্যান্য সময়ে যে দিদি আপনার বাড়িতে রান্না করেন, যে রিক্সাচালক আপনাদের পৌঁছে দেন বাস স্ট্যান্ডে, তাঁদের ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনি থাকলে, ছুটির মধ্যে সবাই মিলে অন্তত একদিন বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করুন। সন্তানের মধ্যে খেলার সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি সচেতনতা যেন না আসে। ডিসেম্বরজুড়েই বাড়িতে আসবে নানা স্বাদের কেক-পেস্ট্রি। কিন্তু চেষ্টা করুন শহরের ছোট ছোট বেকারি থেকে কেক আনার। ফ্লুরিজ, নাহুমস এর পাশাপাশি শহরের ছোট বেকারিগুলোর স্বাদ পাক আপনার সন্তান আর ওর বন্ধুরা। ব্র্যান্ড সচেতন হয়ে ওঠা কাটান সচেতন ভাবেই।

আরও পড়ুন, বড়দিনে আ’মন্ড কেক তৈরির রেসিপি

সিলেবাসের বাইরের বই-সিনেমায় কাটুক এই ক’টা দিন

বাংলায় বড় হচ্ছে, কিন্তু অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে, এখন এটাই দস্তুর। কিন্তু পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোরভারতীর যে টুকু বাকি থেকে গেছে, তাক থেকে বের করে ফেলুন। আপনার সন্তান নিজে বাংলা পড়তে না পড়লে আপনি পড়ে শোনান ফেলুদা, শঙ্কু, টেনিদা। রাতভর পার্কস্ট্রিট বো ব্যারাক না ঘুরতেই পারেন, তার সঙ্গে এই দিনগুলোতে শৈশবের সোনালি স্মৃতি তৈরি করতে সাহায্য করুন আপনার সন্তানকে। আর শেখান বই ভাগ করে নিতে। দেদার বই দেওয়া নেওয়া চলুক ওই ক’টা দিন। সারা দিন ভোগবাদে প্রশ্রয় দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে বড় হওয়া কচিকাঁচা গুলোকে সারা বিশ্বের নানা সিনেমা দেখান, বিশেষ করে ছোটদের। বাড়িতে একসঙ্গে অনেক বাচ্চার সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।

আরও পড়ুন, মুঠোবন্দি স্মার্টফোনে পালটে দিচ্ছে কচিকাঁচাদের মস্তিষ্কের গঠন

ধর্মের বিভাজন থেকে দূরে রাখুন আপনার সন্তানকে

আপনার সন্তান যেন রশ্নি, আর রোকেয়াতে পার্থক্য না করতে পারে। সুস্থ শৈশব উপহার দিন ওকে। নানা ভাষা, নানা মত, নানা ধর্মের খুদে একসঙ্গে কাটাক। এক্ষেত্রে আপনার দায় কিন্তু শুধু নিজের সন্তানের প্রতি নয়। আপনার পড়শি ঘরের সন্তানটিও আপনারই। ওর মধ্যেও খেলতে খেলতে ভালো মূল্যবোধ নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। আজকাল ফ্ল্যাট সংস্কৃতি কসমোপলিটান হয়, এই সুযোগ সুন্দর ভাবে কাজে লাগান। নিজের সংস্কৃতি অটুট রেখে অন্যের সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তুলুন শিশুদের। বড়দিনের ছুটিতে কেক বিনিময় চলুক, পিঠে পুলিও। পাল্টা মত শোনার মত মন তৈরি করুন ওদের।

পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠুক বাচ্চাগুলো

বছরের অন্য সময় সন্তানের মুখটুকু হয়তো দেখতে পান নিয়ম মাফিক সকাল সন্ধে। কিন্তু ইঁদুর দৌড়ে একটু সামনে থাকার জন্য নিস্বাস ফেলার জো নেই। না আপনাদের, না ওদের। এই ছুটির সময়গুলো কিন্তু খুব জরুরি। ভবিষ্যতের নাগরিকদের এই সময়েই একটু একটু করে দিয়ে যেতে হবে জীবনের পাঠ। পরিবেশ সচেতন করে তুলুন ওদের। ফ্ল্যাটবাড়ির চত্ত্বরে, আশেপাশে গাছের চারা পুতুক, বাড়ির টবে সকাল সন্ধে জল দিক, পাড়ার কুকুর বেড়ালদের নিয়ে খেলা চলুক। একটু স্নেহ আর মায়া ঢেলে দিন সবুজ বাচ্চাগুলোর শৈশবে

indian festivals Christmas
Advertisment