একদিনের ঝড়ে কত হাজার শৈশব বদলে গেল নিমেষে। উম্পুন এসে কত হিসেব বদলে দিল, কত মানুষকে ঘরহারা করল। আপনার হয়তো বড় জোর জানলার কাঁচ ভাঙল, অ্যাসবেস্টাসে চাল দুমরোলো সামান্য। কিন্তু কলকাতা শহরটাকে চিনতে পারবেন তো এবার? সারা শহরে এক রাতের ঝড়ে গাছ পড়ল হাজার পাঁচেক। বুকটা খাঁ খাঁ করে আপনার? বাড়ির খুদেটার মনে কোনও বদল আসে? হয়তো আসে, আপনি জানতে পারেন না। আর যদি না আসে, জানবেন, তা আরও ভয়ঙ্কর। শোয়ার ঘরের জানলা লাগোয়া কদম গাছটার সঙ্গেই তো বাড়ছিল আপনার কুচোটা। এক রাতের ঝড়ে সব শেষ। ভেঙে যাওয়া গাছটার জন্য যদি ওর মন না কাঁদে, চোখ না ভেজে, তাহলে কীসের জন্য বেঁচে থাকা, একবার ভাবুন।
তবে এত সংবেদনশীল না হলেও এই যুগে বড় হওয়া থেমে থাকে না, কেরিয়ার গ্রাফ এতটুকু পড়ে যায় না। নামি কোম্পানিতে ক্যাম্পাসিং এর চাকরি আটকায় না, অনসাইটে বছর পাঁচেকের জন্য বিদেশে পোস্টিং, ছবির মতো সুখী সংসার হওয়া আটকায় না। তবে দিনের শেষে ঘুমোতে যাওয়ার আগেই এই পৃথিবীর কাছে নিজেদেরকে দায়বদ্ধ মনে করেন যারা, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ মনে করেন , তারা জেনে রাখুন সব ঘটনার প্রতিবাদ সেই স্থানে গিয়ে করা যায় না, কিন্তু প্রতিবাদ শুরু হতে পারে আপনার ঘর থেকেও। প্রকৃতির কাছ থেকে শুধু না নিয়ে প্রকৃতিকে কিছুই কে ফিরিয়ে দিতে পারিনা আমরা? আমরা যদি নাও পারি ফিরিয়ে দিতে শেখাতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
আরও পড়ুন, শ্বাস নিতে নিতেই রোজ ‘খারাপ’ হচ্ছে আপনার মন! জানেন কী ভাবে?
কীভাবে করবেন সেই কাজ জেনে নিন।
আপনার সন্তান, সন্তানসম, সন্তানতুল্য যে কাউকে যখনই সময় পাবেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখাবেন। প্রতিটা গাছ, প্রতিটা প্রাণী, আকাশ-মাটি-জল সবকিছুকে নিয়ে একসাথে থাকতে শেখাবেন এটা আপনার অবর্তমানে আপনার প্রজন্মের অবর্তমানে আপনার সন্তান অথবা সন্তানের বন্ধু সে হয়তো কখনো প্রতিবাদ গড়ে তুলবে যদি প্রকৃতির সাথে অন্যায় হয়।
সবুজ ভালবাসতে শেখান সন্তানকে
বাড়ি যতই ছোট হোক অথবা ফ্ল্যাট হোক, চারাগাছ পুতবেন। সবুজের প্রতি যেন একটা টান তৈরি হয় আপনার সন্তানের। আপনি আপনার সন্তানকে শেখালে সে তার স্কুলে পাড়ায় বন্ধু-বান্ধবদের শেখাবে। এভাবেই বদলায় সমাজ বিশ্বাস করুন। বাড়িতে গাছ পুতুন, দু’বেলা জল দিতে শেখান। গাছেদের জন্য ভাবতে শেখান।
ফুল ছিঁড়তে উৎসাহিত করবেন না
আপনার সন্তানকে খুব দরকার না পড়লে ফুল তুলতে উৎসাহিত করবেন না। আপনার সন্তানকে বোঝান ফুলদানিতে ফুল মানায় ভালো, কিন্তু এদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা গাছই।
যে কোনও অনুষ্ঠানে গাছ উপহার দিন
জন্মদিন উদযাপন অথবা যে কোনো উল্লেখযোগ্য দিনকে মনে রাখার মতো করে তুলতে বাড়িতে গাছ আনুন। পরিবারের সদস্যদের গাছ উপহার দিন নিয়ম করে। তবেই ছোটবেলা থেকে আপনার সন্তান গাছকে পরিবারের সদস্য মনে করবে।
প্রকৃতিকে কিছু ফিরিয়ে দিতে শেখান
সম্প্রতি আপনার পরিবারের ক্ষুদে সদস্য টি কে নিয়ে লাইন কিং দেখতে গিয়েছেন নিশ্চয়ই। সিম্বার বাবাকে মনে পড়ছে তো ? সিম্বা যখন প্রথম তাদের রাজত্ব চিনতে শিখল, তার বাবা তাকে কি বলেছিল? ” রাজত্ব সামলানোর সময় চিন্তা করতে হবে, তোমার প্রজাদের কে কী দিতে পারবে, তাদের থেকে কী নিতে পারবে তা নয়। এমন করেই আপনার সন্তানকে বোঝান এই প্রকৃতি মাকে কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। অনেক নিয়েছি আমরা, এবার ফিরিয়ে দেবার পালা। ওকে বুঝতে শেখান এই পৃথিবী যেমন আমার, আপনার, আপনার সন্তানের, ঠিক ততটাই সবুজ বনের ।মাঠের গাছের ফুলের ফলের পাখিদের রাস্তার।
সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান সবুজের সমারোহে
ছুটির দিনে সন্তানের সঙ্গে বাগানে গিয়ে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করুন, গাছের যত্ন নিন। শিশুর ছোটবেলা থেকে যেন দেখে, তার বাবা-মা তার প্রতি যতটা যত্নশীল, বাড়ির গাছেদের প্রতি ঘরের কোণে রাখা ক্যাকটাসের প্রতি, ছাদে উঠে আসা মানিপ্লান্টের প্রজাপতির প্রতি, ঘরে ভুল করে ঢুকে পড়া ছাতার পাখিটার প্রতি একই রকম যত্নশীল সহানুভূতিশীল।