পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ থেকে বাঁচতে আজই বদলে ফেলুন আপনার জীবনযাপন

একদিকে ধূমপানে যেমন বাড়ছে ক্যান্সারের প্রবণতা, অন্যদিকে সেডেন্টারি বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় লাইফস্টাইলের জাঁতাকলে বাড়ছে মহিলাদের একাধিক শারীরিক রোগ।

একদিকে ধূমপানে যেমন বাড়ছে ক্যান্সারের প্রবণতা, অন্যদিকে সেডেন্টারি বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় লাইফস্টাইলের জাঁতাকলে বাড়ছে মহিলাদের একাধিক শারীরিক রোগ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বর্তমানে র‌্যাট রেসের যুগে জীবনযাপনের মানের আমুল পরিবর্তনে প্রভাবিত হচ্ছে আট থেকে আশি। ধূমপান, মদ্যপানের মতোই ক্ষতিকারক সেই পরিবর্তন। আধুনিকীকরন এবং বিশ্বায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গিয়ে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে একাধিক রোগ। একদিকে ধূমপানে যেমন বাড়ছে ক্যান্সারের প্রবণতা, অন্যদিকে সেডেন্টারি বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় লাইফস্টাইলের জাঁতাকলে বাড়ছে মহিলাদের একাধিক শারীরিক রোগ, যার মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ অন্যতম।

Advertisment

এর মূল কারণ অনিয়মিত জীবনযাপন, শরীরচর্চার অভাব। আপনিও কি রয়েছেন এই তালিকায়? তাহলে জেনে নিন কী বলছেন চিকিৎসকরা। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ পারভীন বানু।

কী এই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ?
পলিসিস্ট কথার অর্থ একের বেশি সিস্ট। চিকিৎসকরা বলছেন, এক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ থেকে ১২ টি সিস্ট থাকবে প্রতি ওভারিতে, এবং এই সিস্টের ওজন হবে ২ থেকে ৬ মিলি লিটার। পাশাপাশি প্রতিটা ওভারির আয়তন হতে হবে ১০ মিলি লিটারের বেশি।

Advertisment

কেন হয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ?
ঠিক কোন কারণে এই সমস্যা শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে কারণ হিসাবে তিনটে দিক উল্লেখ করা যেতে পারে। এক, জিনগত কারণ, অর্থাৎ যাঁদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে। দুই, পরিবেশগত কারণ। তিন, আচরণগত কারণ, অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া, অনিয়মিত খাদ্যাভাস, ফাস্টফুডের প্রতি ঝোঁক, অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ইত্যাদি। পাশাপাশি মানসিক চাপও এই অসুখের বড়ো কারণ।

আরও পড়ুন: ওবেসিটিতে বাড়ছে মৃত্যুর আশঙ্কা, সাবধান হন আজই

কোন বয়স আক্রান্ত
এর তিনটে বয়সসীমা রয়েছে। এক, ১২-১৩ বছরের স্থূলকায় কিশোরী। এক্ষেত্রে দেখা যায়, এদের একবার পিরিয়ড হওয়ার পর আর পিরিয়ড হয়নি। এরপর ২০-২৫ বছরের একটি দল, যাঁদের বিয়ের পর থেকেই বন্ধ্যাত্ব অর্থাৎ ইনফার্টিলিটির সমস্যা শুরু হয় এবং পাশাপাশি অনিয়মিত পিরিয়ড লক্ষ করা যায়। আরেকটা এজ গ্রুপ রয়েছে, যাঁরা ৩০-৩২ বছরের আশেপাশে, এদের মূল সমস্যা ওবেসিটি এবং অনিমিত পিরিয়ড। চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাঁরা স্থূলকায়া তাঁরাই বেশি আক্রান্ত হন এই সমস্যায়, তবে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগা মহিলাদেরও পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ দেখা দিতে পারে।

উপসর্গ কী?
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজের প্রথম উপসর্গ অনিয়মিত পিরিয়ড বা পিরিয়ড একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়া। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটতে পারে। এ ছাড়াও যে উপসর্গগুলি লক্ষ করা যায় তা হল ওবেসিটি, ব্রণর সমস্যা, মুখে অবাঞ্ছিত লোম, রিসিডিং হেয়ারলাইন অর্থাৎ চুল পড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যালাকটোরিয়া অর্থাৎ স্তন বৃন্ত থেকে সাদা তরল বেরনো ইত্যাদি। পলিসিস্টিক ওভারি দীর্ঘদিন ফেলে রাখার ফলে ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, থাইরয়েডের মতো মাল্টিসিস্টেম এফেক্ট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৪০ বছরের এজ গ্রুপে।

চিকিৎসা কী?
রোগীর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়। কোন বয়সে রোগী আসছে সেই অনুযায়ীই চিকিৎসা হয়। তবে ১২ -১৩ বছরের রোগী এলেও প্রথমেই প্রেগনেন্সির দিক থেকেই ভাবা হয়। এক্ষেত্রে প্রথম কাজ হয়, ক্লিটোরাল এনলার্জমেন্ট রোধ করা। পাশাপাশি ওষুধের থেকেও রোগীর ওজন কমানোর বিষয়ে জোর দেন চিকিৎসকরা। এরপর আল্ট্রা সাউন্ড (ওভারিতে চেঞ্জ), হরমোনাল মাত্রা পরীক্ষা, এন্ড্রোজেনিক ওভার অ্যাকটিভিটি টেস্ট, ওজন ও উচ্চতা পরীক্ষা, লিপিড প্রোফাইল দেখা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে শুধু মহিলাদেরই নয়, ইনফার্টিলিটির কারণ পরীক্ষার জন্য ছেলেদেরও সিমেন অ্যানালিসিস করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, ৪০-র ওপরে কোনও মহিলা এই সমস্যায় ভুগলে তাঁর এন্ড্রোমেট্রিয়াল বায়োপ্সি করানো হয়। এছাড়াও ধাপে ধাপে অন্যান্য চিকিৎসা রয়েছে।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিসিজ কি সম্পূর্ণ সেরে যায়?
এটি ১০০ শতাংশ নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে ওষুধ দিয়ে এবং নিয়মিত মনিটরিং-এর মাধ্যমে সমস্যাগুলোকে অনেকাংশে কমিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি এই রোগের প্রভাবগুলোকেও কমিয়ে দেওয়া যায় ২০-২৫ বছরের জন্য। এতে রেগুলার সাইকেলের পাশাপাশি গর্ভধারণও করতে সক্ষম হন রোগী, কিন্তু এক্ষেত্রে রোগীকে সহযোগিতা করতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে।

সিস্ট থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
খুব কম ক্ষেত্রে রয়েছে, তবে সেটা দীর্ঘকাল ফেলে রাখলে তবেই।

মনে রাখতে হবে
চিকিৎসকরা বলছেন, শুধুমাত্র লাইফস্টাইল অর্থাৎ জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা, হাঁটাচলা, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ছোটোদের দৌড়ানো, খেলাধূলার পাশাপাশি সঠিক সময়ে ওষুধের মধ্যে দিয়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজেই।