ভারতে বহু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। যার ইতিহাস শুনলে গায়ে রীতিমতো কাঁটা দিতে বাধ্য। কারণ, এই সব মন্দিরগুলোর ঘটনা যেন অলৌকিক কিছু। শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যায়। কিন্তু, এই সব মন্দির সম্পর্কে ভক্তদের মনোভাবের এতটুকুও বদল ঘটে না। এদেশের এমনই এক জাগ্রত মন্দির রয়েছে মধ্যপ্রদেশে। এখানকার চম্বল ডিভিশনের মোরেনা জেলার এন্তিতে ওই শনি মন্দির। গোয়ালিয়র থেকে মন্দিরটির দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে নাকি বাস করেন স্বয়ং সূর্যপুত্র গ্রহরাজ শনিদেব।
কথিত আছে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল ত্রেতা যুগে। আর, এখানকার ভক্তদেরও ঠিক তেমনটাই বিশ্বাস। ভক্তদের দাবি, এখনও পর্যন্ত এখান থেকে কেউ খালি হাতে ফেরেননি। হাজার হাজার ভক্ত প্রতিদিন এই মন্দিরে আসেন। মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভিড় তো লেগেই আছে। দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকেও বহু মানুষ এই মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত করেন। শুধু কী তাই! বিদেশ থেকেও অসংখ্য ভক্ত নানা মনস্কামনা নিয়ে এই মন্দিরে আসেন। তাঁদের মধ্যে যেমন অনাবাসী ভারতীয়রা রয়েছেন। তেমনই রয়েছেন বহু বিদেশি ভক্তও।
আর, যাঁরা এখানে একবার আসেন, কামনা পূরণের পর কৃতজ্ঞতা জানাতে আর নানা নতুন কামনা নিয়ে তাঁদের বারবার এই মন্দিরে আসতে দেখা যায়। কথিত আছে এখানকার শনিদেবের কাঠামোটি স্বয়ং হনুমান লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে মোরেনায় নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি এরকম যে শনিদেবকে কারারুদ্ধ করেছিলেন রাবণ। তখন লঙ্কাকাণ্ডের পর হনুমান রাবণের হাত থেকে শনিদেবকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ভক্তদের বিশ্বাস, সেই সময় থেকেই শনিদেব গোয়ালিয়রের কাছে মোরেনার এই মন্দিরেই থাকেন।
আরও পড়ুন- পুরুলিয়ার গৌরীনাথ ধাম, যেখানে ভক্তদের স্বপ্নে দর্শন দেন মহাদেব, পূরণ করেন মনস্কামনা
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কোনও এক শনিবারে শনিদেবের এই কাঠামোকে ঘিরে মন্দির নির্মাণের সূচনা করিয়েছিলেন মহারাজা বিক্রমাদিত্য। পরে সিন্ধিয়া শাসকরা এই মন্দিরের সংস্কার করান। ১৮০৮ সালে গোয়ালিয়রের তৎকালীন রাজা দৌলতরাও সিন্ধিয়া। ১৯৪৫ সালে দেবস্থান বোর্ডের দায়িত্বে আসে এই মন্দির। ভক্তদের ধারণা, এই মন্দিরের শনি প্রতিমাই হল শনিদেবের আসল চেহারা। শনিদেবের প্রকোপে পড়ে হাজার হাজার ভক্ত এখানে এসে পুজো করে প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন।
এখানে পুজো করার পর ভক্তরা নিজেদের কাপড়, জুতো-সহ অন্যান্য সামগ্রী ফেলে রেখে যান। এর ফলে নাকি পাপ ও দারিদ্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, শনিদেবের শক্তি এই মন্দিরের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। আর, তাই এই মন্দিরে এসে নিজেদের দুঃখকষ্টের কথা শনিদেবকে জানালে সেই দুঃখকষ্ট লাঘব হয়।