দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ সংঘ আদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদা ঠাকুর। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে তাঁর সিদ্ধিলাভের উৎসব পালিত হয়। অন্নদা ঠাকুরের আসল নাম অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তাঁর মায়ের নাম তিলোত্তমা দেবী। বাবার নাম অভয়চরণ ভট্টাচার্য। তিন সন্তানের মধ্যে অন্নদাচরণ ছিলেন মেজো। মেধাবী ছাত্রটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসক হতে লেখাপড়ার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। ১৩২১ সালে বৃত্তি নিয়ে কবিরাজি পাশও করেন। থাকতেন আর্মহাস্ট স্ট্রিটে বন্ধুর বাড়িতে। বন্ধুর বাবার সহযোগিতায় ভাড়ায় একটি কবিরাজি ওষুধের দোকান খোলেন।
কলকাতায় থাকাকালীন শ্রীরামকৃষ্ণের স্বপ্ন দেখেন। বাংলাদেশের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও দেখেন সেই শ্রীরামকৃষ্ণের স্বপ্ন। যিনি তাঁকে স্বপ্নে ইডেন গার্ডেনসে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে ইডেন গার্ডেনসের ঝিলের পাশে দেবী আদ্যার মূর্তি খুঁজে পান। ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মূর্তি দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমী তিথিতে বিসর্জন দেন। গঙ্গায় বিসর্জনের আগে সেই মূর্তির ছবি তুলিয়ে রাখেন। যে ছবির অনুকরণে পরে তৈরি করা হয় দেবীর আদ্যার মূর্তি। কথিত আছে, স্বপ্নেই তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণ দীক্ষা দিয়েছিলেন। বাংলার ১৩২৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে স্বপ্নে সন্ন্যাস দীক্ষা দিয়েছিলেন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে পুরীতে প্রয়াত হন অন্নদাঠাকুর।
আরও পড়ুন- যা না-জানলে, মকর সংক্রান্তি পালন কার্যত অর্থহীন
তাঁর ইচ্ছাতেই আদ্যাপীঠে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসার ব্যবস্থা। এখানকার অ্যাম্বুল্যান্সে অন্য জায়গার অ্যাম্বুল্যান্সের মত লেখা নেই, 'সংক্রামক ব্যাধির জন্য নহে'। শুধু তাই নয়, অন্নদা ঠাকুরের নির্দেশে মন্দিরের আয় থেকে বালকদের জন্য তৈরি হয়েছে ব্রহ্মচর্যাশ্রম। বালিকাদের জন্যও রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ সংঘ আদ্যাপীঠে দেবী আদ্যার জন্য প্রতিদিন ২২.৫০ সের চাল নেওয়া হয়। রাধাকৃষ্ণের জন্য নেওয়া হয় দৈনিক ৩২.৫০ সের চাল। দেবীকে শুধু পরমান্ন নিবেদন করা হয়। বাকি ভোগ নিবেদন করা হয় পাশের ভোগালয়ে। রামকৃষ্ণদেবের জন্য নেওয়া হয় ১২.৫০ সের চাল। রাতে তৈরি করা হয় অমৃতভোগ। যা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট ঘি এবং উৎকৃষ্ট মানের চাল দিয়ে তৈরি।
এপার বাংলা তো বটেই। ওপার বাংলাতেও প্রতিষ্ঠা হয়েছে অন্নদাঠাকুরের বিরাট আশ্রম। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রাউজানে উওর গুজরায় সেই আশ্রম তৈরি হয়েছে বিরাট জমির ওপর। সেখানে অন্নদা ঠাকুরের নামে কাজ করছে শ্রীশ্রী অন্নদাঠাকুর আদ্যাপীঠ রামকৃষ্ণ সংঘ। তার মধ্যে ব্রহ্মচারী মুরাল ভাইয়ের নামে জলাশয়ের নামকরণ করা হয়েছে 'মুরাল ভাই সরোবর'। শুধু সেবাই নয়, দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত প্রতিদিন আদ্যাপীঠে শান্তির খোঁজে যাতায়াত করেন।