Kids Phone Addiction: আজকাল বাচ্চারা মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং রিলসের প্রতি এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে তাদের এসব থেকে দূরে রাখা বাবা-মায়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। পড়াশোনা হোক বা বিনোদন, বাচ্চারা প্রতিটি বিষয়ে ফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এই অভ্যাস শুধু বড় স্কুল বা কলেজগামী পড়ুয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ১-২ বছরের ছোট শিশুরাও ফোনের প্রতি এমনভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে যে তারা ফোন না দেখলে খেতেও চায় না বা চুপচাপ বসতেও চায় না। এটি তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। যদি আপনিও মোবাইল ফোনের অভ্যাস কমানোর চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তবে চিন্তার কিছু নেই। শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে এই ৫টি সহজ পদ্ধতি আপনার সাহায্য করতে পারে।
১. রুটিন বদলান, কিছুটা কঠোর হন
বাবা-মায়ের উচিত বাচ্চাদের জন্য নির্দিষ্ট স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করা। স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন যে প্রতিদিন মাত্র এক ঘণ্টার স্ক্রিন টাইম থাকবে, সেটা টিভি দেখার জন্য হোক বা ফোন অথবা ট্যাবলেট। বাবা-মায়ের উচিত একটু কঠোর হওয়া এবং বাচ্চাদের এই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা। একইসঙ্গে, যদি ব্যস্ত থাকেন তবে বাচ্চাকে শান্ত বা ব্যস্ত রাখতে ফোন দেওয়ার অভ্যাস বন্ধ করুন।
২. বাচ্চাদের পছন্দের অ্যাক্টিভিটি খুঁজে দিন
মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখার সেরা উপায় হলো বাচ্চাদের খেলা-ধুলা, বই পড়া অথবা সৃজনশীল কার্যকলাপে যুক্ত করা। বাবা-মায়েরা তাদের পার্কে খেলতে পাঠাতে পারেন, সাইকেল চালানোর জন্য উৎসাহিত করতে পারেন। হবি ক্লাস, যেমন নাচ, সাঁতার, আউটডোর গেমস বা অন্য কোনও অ্যাক্টিভিটিতে নাম লেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। যদি তাদের পছন্দ বুঝে সিদ্ধান্ত নেন, তবে ফলাফল আরও ভালো হবে।
৩. নিজের কাছ থেকে ফোন সরিয়ে রাখুন
যখন বাবা-মা বাচ্চাদের সঙ্গে থাকেন, তখন নিজের ফোন দূরে সরিয়ে রাখুন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের সঙ্গে খেলুন, ধাঁধা জিজ্ঞেস করুন, নতুন বিষয় শিখিয়ে দিন বা গল্প শোনান। এর ফলে বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবে ফোন থেকে দূরে থাকবে। এটাই বাবা-মায়ের জন্যও উপকারী।
আরও পড়ুন আপনিও কি বিষণ্ণতার শিকার? এই লক্ষণগুলি দেখলেই পরামর্শ নিন চিকিৎসকের
৪. বন্ধু ও খেলনা দিন
বাচ্চাদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে দিন। একইসঙ্গে তাদের এমন খেলনা দিন যা তাদের বয়সের উপযোগী। অনেক সময় বয়সের তুলনায় ছোট বা বড় খেলনা তারা পছন্দ করে না।
৫. ছোট দায়িত্ব দিন
বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি তাদের ছোট ছোট ঘরোয়া কাজের দায়িত্ব দিন। যেমন বার্থডে, ফাংশনে ছোট টাস্ক দিন। গাছে জল দেওয়া, নিজের খেলনা বা জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা, আলমারি পরিষ্কার করা, কিছু সাজানোর দায়িত্ব দিলে তারা ব্যস্ত থাকবে এবং ফোন থেকে দূরে থাকবে।
মোবাইলের আসক্তি ক্ষতিকর, হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাচ্চাদের মোবাইলের আসক্তি থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কিছুদিন আগে AIIMS, নয়াদিল্লির গবেষণা জানায় যে দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহারে বাচ্চাদের চোখের দৃষ্টিতে খারাপ প্রভাব পড়ে। এমন বাচ্চারা মায়োপিয়াতে ভুগছে। এছাড়া তারা খিটখিটে হতে পারে এবং উদ্বেগ, ডিপ্রেশন ও আত্মবিশ্বাসের অভাবের মতো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। মোবাইলের আসক্তি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের চিন্তায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। একইসঙ্গে, অনলাইনে সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবা-মায়েদের সচেতন হওয়া জরুরি। মোবাইল বেশি ব্যবহারে বাচ্চাদের পড়াশোনা, ঘুম এবং সামাজিক জীবনে খারাপ প্রভাব পড়ছে। তাই বাচ্চাদের খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিডের সময় মোবাইল যতটা প্রয়োজনীয় ছিল, এখন ততটাই ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। চেষ্টা করুন বাচ্চাদের এমন খবর জানাতে যাতে তারা এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে সুইডেনে ২ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে—এটা কেন করা হয়েছে জানালে তাদের সচেতনতা বাড়বে।
এই পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করলে বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমাতে সাহায্য করতে পারেন।