এলাকায় কালী মন্দির। এমন দৃশ্য এই বাংলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু, একটা গোটা গ্রামের আরাধ্যা দেবী লক্ষ্মী। তা-ও আবার তাঁর স্থায়ী মন্দির গ্রামে। একেবারে কালীমন্দিরের মতই। এলাকাবাসী তাই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বাড়িতে করেন না। পূজা সেরে নেন গ্রামের ওই লক্ষ্মী মন্দিরে। কারণ, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। আর, সেই কারণে গত দেড় হাজার বছর ধরে টিকে আছে এই প্রথা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন এই মন্দিরে ন'টি ঘট জলে ভরে পুজো করা হয়। দেবীকে দেওয়া হয় ১০৮টি ক্ষীরের নাড়ুর নৈবেদ্য।
দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। একথা জানার পর শুধু এই গ্রামের বাসিন্দারাই নন। আশপাশের গ্রাম থেকেও বাসিন্দারা ছুটে আসেন এই মন্দিরে। করেন দেবীর আরাধনা। আর, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময় তো কথাই নেই। গোটা মন্দির চত্বর ভক্তদের ভিড়ে ভরা থাকে। পুজোর জন্য রীতিমতো লাইন পড়ে যায়। যেমনটা আমরা দেখি কালী বা দেবী তারার মন্দিরে। এই গ্রাম রয়েছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই গ্রামকে ঘোষ গ্রাম বলেই ডাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামে এই পুজো শুরুর পিছনে এক ইতিহাস আছে। বাংলা তখন গৌড় নামে পরিচিত ছিল। রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। সেই সময় কামদেব ব্রহ্মচারী নামে এক পরিব্রাজক সাধক এই গ্রামে এসেছিলেন। তিনি ধনদেবীর আরাধনায় সিদ্ধিলাভ করার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজছিলেন। শক্তি আরাধনার কেন্দ্রভূমি রাঢ়বঙ্গের আনাচ-কানাচ ঘুরে তিনি এসে পৌঁছন ময়ূরেশ্বরের ঘোষ গ্রামে। সময়টা ছিল বর্ষাকাল। কথিত আছে, সেই ব্রহ্মচারী ভরা বর্ষার নদী সাঁতরে এসে পৌঁছেছিলেন এই গ্রামে।
আরও পড়ুন- কোজাগরী পূর্ণিমায় কোন রাশির জাতক কী ভোগ দিলে, সন্তুষ্ট হবেন দেবী লক্ষ্মী
এলাকার এক নিম গাছের তলায় তিনি সাধনা শুরু করেন। অবশেষে সিদ্ধিলাভও করেন। দেবী লক্ষ্মী ওই সাধককে স্বপ্নে দেখা দেন বলেই বিশ্বাস স্থানীয় বাসিন্দাদের। দেবী স্বপ্নে কামদেব ব্রহ্মচারীকে ওই জায়গায় নিমকাঠের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন। দেবীর কথামতোই স্থানীয় বাসিন্দা সজল ঘোষের সাহায্যে কামদেব ব্রহ্মচারী দেবীর নিমকাঠের মূর্তি তৈরি করেন। তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। পরে, মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির জমিদার কৃষ্ণচন্দ্রের সহায়তায় এখানে ধনদেবীর আরাধনার জন্য মন্দির তৈরি হয়।