ওঁদের অনেকেরই রান্নার খুব শখ। কেউ তো নিয়মিত বাড়িতে রাঁধেন। কেউ আবার মাঝেমধ্যে রান্নাঘরে ঢুঁ মারেন। কিন্তু রান্নার প্রতিযোগিতা! সে নিয়ে ভাবেন নি এতদিন। কিন্তু এবার তেমনই এক ‘চ্যালেঞ্জ’ নিচ্ছেন ওঁরা। চ্যালেঞ্জই বটে। চোখে দেখতে পান না ওঁরা। সেই প্রতিবন্ধকতাকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওঁরা এবার হাতা-খুন্তি ধরছেন। তাও আবার রন্ধন প্রতিযোগিতায়। দৃষ্টিহীনদের নিয়ে এমনই অভিনব প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে উত্তর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ‘সংবেদন’।
দৃষ্টিহীনদের রান্নার প্রতিযোগিতা এ শহরে কেন, গোটা দেশে নাকি এই প্রথমবার, এমন দাবিই করেছেন মূল উদ্যোক্তা সমিত সাহা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে এ প্রসঙ্গে সমিত বলেন, "দৃষ্টিহীনদের নিয়ে আগে নাচ-গান, খেলাধুলোর মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু রান্নার প্রতিযোগিতা এই প্রথমবার করছি। দেশে এর আগে এমন প্রতিযোগিতা হয়েছে কিনা সন্দেহ।"
কেমন হবে এই প্রতিযোগিতা? জবাবে সমিত বলেন, "২৫ জন দৃষ্টিহীন তরুণ-তরুণী অংশ নিচ্ছেন প্রতিযোগিতায়। বিচারক হিসেবে দু’জন শেফ থাকছেন। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে ৩ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ২ হাজার টাকা দেওয়া হবে।" সমিত আরও বললেন, "রান্নার প্রস্তুতি বাদে আধঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। রান্নার টপিক বলে দেওয়া হয়েছে সকলকে। শীতের সবজি নিয়ে যে কোনও রান্না করতে হবে।"
আরও পড়ুন: বরফি-জিলিপিকে টেক্কা দিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় মিষ্টির খেতাব পেল গোলাপ জাম
কেন এমন ধরনের উদ্যোগ? সমিতের কথায়, "দৃষ্টিহীন মানেই যে ওঁরা অন্য কারও উপর নির্ভরশীল হবেন, তা নয়। যে কোনও কাজেই ওঁরা সক্ষম। রান্নাও ওঁরা করতে পারেন। এ ভাবনা থেকেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি।"
রান্নার প্রতিযোগিতা ঘিরে উচ্ছ্বসিত প্রতিযোগীরাও। মাম্পি দে নামের এক দৃষ্টিহীন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "দৃষ্টিহীনদের নিয়ে বরাবর এমন ধরনের প্রতিযোগিতা হয়ে এসেছে যেখানে চোখের ভূমিকা থাকে না। কিন্তু রান্নার ক্ষেত্রে তো সে উপায় নেই। সেদিক থেকে এটা আমাদের কাছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ। নিজেদের প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতা বেশ চ্যালেঞ্জিং।" আরেক প্রতিযোগী ডলি দত্ত বলেন, "দৃষ্টিহীনদের নিয়ে এমন প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে, এটা ভেবে ভাল লাগছে। যতই আমরা বলি না কেন, আজও আমাদেরকে এ সমাজ কোথাও হলেও যেন দূরে সরিয়ে রেখেছে।" আরেক দৃষ্টিহীন সরস্বতী হালদার আবার প্রতিযোগিতায় ফুলকপি দিয়ে দারুণ এক পদ বানাচ্ছেন। সেজন্য বাড়িতে রীতিমতো প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, "নাচ-গানের প্রতিয়োগিতা করা হয়েছে আগে। কিন্তু এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন দেখে ভাল লাগছে।"
আগামী রবিবার, ১৩ জানুয়ারি, সকাল ১০ টায় শ্যামবাজারে ‘সংবেদন’-এর অফিস চত্বরেই বসছে রান্নার প্রতিযোগিতার আসর। দৃষ্টিহীনদের হাতা-খুন্তির ক্যারিশমা দেখতে হলে আপনি একবার ঢুঁ মারতেই পারেন সেখানে।