দক্ষিণ ভারত মানেই নানান ধাঁচের নানান কারুকার্যের মন্দিরের সমাগম। নিখুঁত কাজ সঙ্গে তাঁর ঐতিহাসিক মহিমা ভারতবর্ষের নানান স্থানের মানুষকে যেমন আকর্ষণ করে। তেমনই দেশ বিদেশের মানুষদের সমাগম ও লক্ষ্যনীয়। দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ মন্দিরের আরাধ্য দেবতা স্বয়ং পরমেশ্বর শিব।
রবিবার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তেলেঙ্গানার রামাপ্পা মন্দিরকে ভারতের ৩৯তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৮০০ বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই মন্দির রুদ্রেশ্বরার (ভগবান শিব) আরাধনায় আজও সমান ভাবে লিপ্ত। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে তেলেঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে রামাপ্পা মন্দিরকে মনোনয়ন করা হয় হেরিটেজ কমিটির কাছে। ২০১৪ সাল থেকেই এটি ইউনেস্কোর অস্থায়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল বলেই জানা যায়।
তবে সম্প্রতি ২০২১ সালে ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমেই আলোচনা করা হয়। রুদ্রেশ্বর (রামাপ্পা) মন্দিরটি মানদণ্ড ১ (মানব সৃজনশীল প্রতিভা) এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এবং মানদণ্ড ৩ (একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ) এর অধীনে মনোনীত হয়। ২১ জনের মধ্যে থেকে ১৭ জনের সম্মতি এবং আবেদন দেশের এই স্থানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বলে জানা যায়।
ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই টুইট করে সাধুবাদ এবং শুভেচ্ছাবার্তা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশেষ করে তেলেঙ্গানার নাগরিকদের উদ্দেশে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “মূর্তিমান রামাপ্পা মন্দিরটি মহান কাকাতিয়া রাজবংশের অসামান্য কারুশিল্পের নিদর্শন। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করব এই মহিমান্বিত মন্দিরটি দর্শন করার এবং এর মহিমার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার ”…এরপরই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী এবং সেকেন্দ্রাবাদের সাংসদ জি কিষাণ রেড্ডি তেলেঙ্গানার জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
আরও পড়ুন ৮ মাস পর খুলল আইফেল টাওয়ার, প্রথম দিনই একটা কাণ্ড করলেন জার্মান প্রেমিক-যুগল
রামাপ্পা মন্দিরটি ভগবান শিবের আরাধনায় রত। ১২১৩ সালের প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, কাকাতিয়া জেনারেল রেচারিলা রুদ্র রেড্ডি শাসক গণপতি দেবের শাসনকালে এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। এটি সুসজ্জিত ও গ্রানাইট দ্বারা নির্মিত। ডোলারাইটের স্তম্ভগুলিতে বেলেপাথরের কারুকার্য। অভ্যন্তরীণ অভয়ারণ্য বা ভাইমানা নজর কাড়বে সকলেরই। রামাপ্পা মন্দিরের ভাস্কর্য, বিশেষত এর বন্ধনশৈলি নির্মাণের ৮০০ বছর পরে আজও অক্ষুণ্ণ।
মন্দিরের অসামান্য সার্বজনীন মূল্য এবং তার মহিমার সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিব রাঘভেন্দ্র সিংহ জানান, “রামাপ্পা একটি বৃহত্তর প্রাচীরের প্রধানত শিব মন্দির, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট মন্দির রয়েছে এবং মন্দিরের কাঠামো সর্বাধিক স্তরের সৃজনশীল শৈল্পিক এবং প্রকৌশল প্রতিভাগুলির একটি সাক্ষ্য হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে যা কাকাতিয়া শাসনকালের (১১২৩-১৩২৩) বর্ণবাদী শিল্পসত্ত্বার বাহক।" তিনি আরও বলেন, মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতের তেলুগু বংশোদ্ভুত মানুষদের ক্ষেত্রে এক স্বর্ণযুগ নিয়ে আসে। এটি নিঃসন্দেহে কাকাতিয়া সম্প্রদায়ের এক অন্যতম নিদর্শন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন