Madana Trayodashi: কেন মদন ত্রয়োদশীতেই শুরু হয় গাজনের মেলা? পিছনে এক বিরাট রহস্য
Madana Trayodashi marks the beginning of the Gajan fair. Discover the ancient myths and divine stories that explain this unique tradition. মদন ত্রয়োদশী থেকে গাজনের শুরু— পিছনে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে।
Madana Trayodashi marks the beginning of the Gajan fair. Discover the ancient myths and divine stories that explain this unique tradition. মদন ত্রয়োদশী থেকে গাজনের শুরু— পিছনে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে।
Why Gajan Fair Begins on Madana Trayodashi, the mythological connection: মদন ত্রয়োদশী। এই উপলক্ষে শুক্রবার মদনদেবের পুজো আয়োজিত হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। আর, ঐতিহ্য মেনে তারকেশ্বরধামে গাজনের পাঁচ দিনব্যাপী মেলা (Charak) এবং উৎসবও আজ থেকেই শুরু হয়েছে।
Advertisment
কী এই মদন ত্রয়োদশী?
মদন ত্রয়োদশী হলো হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি। যা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পালিত হয়। এই ত্রয়োদশীতে ভগবান বিষ্ণুর পূজার সঙ্গে প্রেমদেব মদন বা কামদেবের নামও যুক্ত, তাই এটি 'মদন' ত্রয়োদশী নামে পরিচিত।
মদন ত্রয়োদশীর মাহাত্ম্য:
Advertisment
এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে উপবাস ও ভগবান বিষ্ণুর নামস্মরণ করলে জীবনের সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মানসিক শান্তি, দাম্পত্য সুখ, এবং প্রেমে সফলতা লাভের জন্য এই ব্রতের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
Gajan Fair: গাজনের মেলা। (ছবি- শশী ঘোষ)
ব্রত পালনের নিয়ম:
এই ব্রতের আগের দিন নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়।
ত্রয়োদশীতে সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করে উপবাস শুরু করা হয়।
দিনভর ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা, ভজন, ও ধর্মপাঠ করা হয়।
পরদিন চতুর্দশী তিথিতে উপবাস ভঙ্গ করে ব্রত সম্পন্ন হয়।
বিশেষ দিক:
এই ত্রয়োদশী কামনা-বাসনা সংযমের শিক্ষা দেয়। জীবনের প্রতি এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। বিবাহ বা প্রেম সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে এই ব্রত করলে তা শুভফলদায়ক হয় বলেই মনে করা হয়। এই মদন ত্রয়োদশী থেকে গাজনের মেলা শুরু হওয়ার পিছনে আছে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং লোকাচারভিত্তিক এক গভীর সম্পর্ক।
মদন ত্রয়োদশী মূলত মদন বা কামদেব-এর পুনর্জন্ম ও পুনরুজ্জীবনের প্রতীক। পুরাণ অনুযায়ী, শিবের ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাতে গিয়ে কামদেব তাঁর তৃতীয় চক্ষে দগ্ধ হন।
পরে রতির তপস্যা এবং শিবের কৃপায় কামদেব আবার ‘অনাঙ্গ’ রূপে ফিরে আসেন– অর্থাৎ শরীরহীন প্রেমের প্রতীক হয়ে। সেই দিনটিই হল মদন ত্রয়োদশী।
এই ঘটনা থেকেই বিশ্বাস জন্মেছে যে এই তিথিতে কামদেব বা প্রেমদেব আবার জীবিত হন, আর এখান থেকেই গাজনের সূচনা।
Gajan Fair: গাজনের মেলা শুরু। (ছবি- শশী ঘোষ)
শিব-পার্বতীর দাম্পত্যের সূচনা:
এই সময় থেকেই শিব-পার্বতীর মিলনের আগমন ধ্বনিত হয়, যা গাজনের মূল ধর্মীয় আবহ তৈরি করে।
গাজন উৎসবে শিবকে প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করা হয়, এবং এই সময় পার্বতীর তপস্যা ও শিবের প্রসন্নতা — এই পৌরাণিক কাহিনিগুলি এই উৎসবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
আষাঢ়ে গ্রীষ্মে ঋতু পরিবর্তনের ইঙ্গিত:
মদন ত্রয়োদশী চৈত্র মাসে পড়ে, যা প্রকৃতিতে ঋতু পরিবর্তনের সময় বা গ্রীষ্মের সূচনালগ্ন। এই সময় নতুন জীবন, শক্তি এবং প্রজননের ভাবনা গাঁথা হয়েছে লোকাচারে।
ফলে গাজনের মত এক চেতনার উৎসব মদন ত্রয়োদশী থেকে শুরু হওয়া প্রতীকীভাবে যথাযথ।
শুধু তারকেশ্বর নয়, মদন ত্রয়োদশীর দিন থেকেই গ্রামবাংলার বহু জায়গায় শুরু হয় গাজনের মেলা, যেখানে শিবগাজন, ধর্মগাজন, নীলগাজনের মতো নানা রূপে উৎসব পালিত হয়।
এই সময় ‘সন্ন্যাসী’ বা ‘ভক্ত’রা তপস্যা, ব্রত, এবং দেহ-নির্যাতনের মাধ্যমে ভগবানের আরাধনা করেন।
সোজা কথায় বলতে গেলে, মদন ত্রয়োদশী মানে কামদেবের ফিরে আসা, প্রেমের পুনর্জন্ম, ও শিব-পার্বতীর মিলনের পথে প্রথম ধাপ। এই বিশ্বাস ও লোকাচারের মেলবন্ধনে মদন ত্রয়োদশী থেকেই গাজনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলাটি শুরু হয়।